HS Geography Atmosphere Climate And Natural Vegetation Suggestion Question Answer - উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক গাছপালা প্রশ্ন উত্তর
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক গাছপালা সম্পর্কিত উচ্চমাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তাদের উত্তর নিচে দেওয়া হলো:-
এই দ্বাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর – WBCHSE Class 12 Geography Question and Answer, Suggestion, Notes –
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক গাছপালা (তৃতীয় অধ্যায়) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর । West Bengal Class 12th Twelve XII Geography Examination
MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer
গুলি আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট
HS Geography Atmosphere, Climate And Natural Vegetation Suggestion - উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক গাছপালা
বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)
বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) হলো গ্যাসের এক স্তর, যা পৃথিবী বা অন্য কোনো গ্রহ বা উপগ্রহকে ঘিরে রাখে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল প্রধানত নাইট্রোজেন (প্রায় ৭৮%) এবং অক্সিজেন (প্রায় ২১%) দ্বারা গঠিত, আর বাকি অংশে কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গন, জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য গ্যাস থাকে।
বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহ:
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে প্রধানত পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়, প্রতিটি স্তরের ভৌত বৈশিষ্ট্য এবং কাজ ভিন্ন:
1. ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere):
- পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮-১৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
- আবহাওয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যক্রম এই স্তরে ঘটে।
- উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা কমতে থাকে।
2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere):
- প্রায় ১৫ কিমি থেকে ৫০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
- ওজোন স্তর এই স্তরের মধ্যে অবস্থিত, যা সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মি শোষণ করে।
- এই স্তরের উপরের দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
3. মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere):
- প্রায় ৫০ কিমি থেকে ৮৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
- এই স্তরে উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং এটি সবচেয়ে ঠাণ্ডা স্তর।
- উল্কাপিণ্ড এই স্তরে এসে পুড়ে যায়।
4. থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere):
- প্রায় ৮৫ কিমি থেকে ৬০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
- এই স্তরে উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- আয়নমণ্ডল এই স্তরের অংশ, যেখানে রেডিও সংকেত প্রতিফলিত হয় এবং অরোরা (মেরুপ্রভা) দেখা যায়।
5. এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere):
- প্রায় ৬০০ কিমি থেকে শুরু করে বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত।
- এখানে গ্যাসের কণা খুব কম থাকে এবং ধীরে ধীরে মহাশূন্যের সাথে মিশে যায়।
বায়ুমণ্ডলের ভূমিকা:
- বায়ুমণ্ডল পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে রক্ষা করে।
- এটি পৃথিবীর উপরিভাগের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং আবহাওয়া তৈরি করে।
- অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, এবং অন্যান্য গ্যাস সরবরাহ করে যা জীববৈচিত্র্য এবং জীবজগৎকে টিকিয়ে রাখে।
জলবায়ু (Climate)
জলবায়ু (Climate) হলো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার গড় অবস্থা। এটি বছরের পর বছর ধরে একটি অঞ্চলের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বাতাসের গতি, আর্দ্রতা ইত্যাদি বিষয়গুলোর গড় পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। জলবায়ু সাধারণত কয়েক দশক থেকে হাজার হাজার বছরের সময়কালের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাই এটি স্বল্পমেয়াদী আবহাওয়ার পরিবর্তন বা ঋতু পরিবর্তনের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল।
জলবায়ুর প্রধান উপাদান:
- 1. তাপমাত্রা:- একটি অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে কেমন থাকে।
- 2. বৃষ্টিপাত:- ওই অঞ্চলে বৃষ্টি, তুষারপাত বা অন্য ধরনের পানি পড়ার পরিমাণ।
- 3. আর্দ্রতা:- বায়ুর মধ্যে আর্দ্রতার গড় পরিমাণ।
- 4. বায়ুপ্রবাহ:- বায়ুর গতি এবং দিকের ওপর ভিত্তি করে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়।
- 5. আলোক প্রাপ্তি:- সূর্যের আলো কতটা সময় ওই অঞ্চলে উপস্থিত থাকে।
জলবায়ুর শ্রেণীবিভাগ:
জলবায়ুকে বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান, তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে কিছু প্রধান শ্রেণি হলো:
1. উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু:
- উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ু, যেখানে সারাবছর উচ্চ তাপমাত্রা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
- উদাহরণ: আমাজন বনের অঞ্চল, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অংশ।
2. মেরু জলবায়ু:
- ঠান্ডা এবং শুষ্ক জলবায়ু, যেখানে শীতল তাপমাত্রা সারাবছর ধরে থাকে এবং বরফ থাকে।
- উদাহরণ: আর্কটিক ও আন্টার্কটিকার অঞ্চল।
3. মধ্য অক্ষাংশের জলবায়ু:
- মাঝারি তাপমাত্রা, যেখানে শীত এবং গ্রীষ্মের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য দেখা যায়।
- উদাহরণ: ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অংশ।
4. বৃষ্টি-ছায়া বা মরু জলবায়ু:
- শুষ্ক জলবায়ু, যেখানে বৃষ্টিপাত খুবই কম এবং গড় তাপমাত্রা বেশি থাকে।
- উদাহরণ: সাহারা মরুভূমি, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশ।
জলবায়ুর পরিবর্তন:
জলবায়ু পরিবর্তন হলো পৃথিবীর গড় জলবায়ুগত অবস্থা ধীরে ধীরে বদলে যাওয়া। এটি প্রাকৃতিক কারণ এবং মানবসৃষ্ট কারণ উভয়েই হতে পারে। বর্তমানে, কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নিঃসরণের ফলে **গ্লোবাল ওয়ার্মিং** এবং জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, যা সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদির মতো ঘটনাগুলোর সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে।
জলবায়ুর গুরুত্ব:
- জীববৈচিত্র্য:- একটি অঞ্চলের জলবায়ু নির্ধারণ করে সেখানকার উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের জীবনধারা।
- কৃষি:- কৃষিকাজ এবং খাদ্য উৎপাদন জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল।
- মানব সমাজ: - মানুষের বসবাস, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ওপর জলবায়ুর বিশাল প্রভাব রয়েছে।
জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ এবং তার পরিবর্তনের সঠিক বিশ্লেষণ আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং পরিবেশগত সুরক্ষায় সাহায্য করে।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation)
স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation) হলো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের এমন উদ্ভিদ বা বৃক্ষরাজি, যা স্বাভাবিকভাবে ওই অঞ্চলের জলবায়ু ও মাটির বৈশিষ্ট্যের সাথে খাপ খেয়ে জন্মে ও বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের উদ্ভিদ মানুষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে বংশবিস্তার করে।
স্বাভাবিক উদ্ভিদের ধরন:
স্বাভাবিক উদ্ভিদ একেক অঞ্চলে একেক রকম হতে পারে, কারণ এটি নির্ভর করে মূলত এলাকার তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মাটির গুণমান এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর। কিছু প্রধান স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলের ধরন:
1. উষ্ণমণ্ডলীয় রেইনফরেস্ট (Tropical Rainforest):
- যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, সেই অঞ্চলে ঘন এবং সবুজ বৃক্ষরাজির আধিক্য থাকে।
- উদাহরণ: আমাজন বন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনাঞ্চল।
2. মেরু বা টুন্ড্রা অঞ্চল (Tundra Vegetation):
- মেরু অঞ্চলের ঠান্ডা ও শুষ্ক এলাকায় খুব কম উদ্ভিদ জন্মায়। এখানে প্রধানত মস, লাইকের ও ছোট গাছপালা দেখা যায়।
- উদাহরণ: আর্কটিক এবং আন্টার্কটিকার অঞ্চল।
3. মরু উদ্ভিদ (Desert Vegetation):
- শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়াযুক্ত মরুভূমি অঞ্চলে কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ যেমন ক্যাকটাস, এবং অন্যান্য শুকনো অঞ্চলের গাছ জন্মায়।
- উদাহরণ: সাহারা মরুভূমি, থর মরুভূমি।
4. মধ্য অক্ষাংশের ঘাসভূমি (Temperate Grassland):
- শীতল ও মাঝারি তাপমাত্রার অঞ্চলে ঘাস এবং কিছু ছোট গুল্ম দেখা যায়। এখানে বড় গাছ কম জন্মায়।
- উদাহরণ: প্রেইরি (উত্তর আমেরিকা), স্টেপ (ইউরেশিয়া)।
5. উপকূলীয় উদ্ভিদ (Mangrove Vegetation):
- সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলে লবণাক্ত পানিতে জন্মানো উদ্ভিদ।
- উদাহরণ: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন, থাইল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চল।
স্বাভাবিক উদ্ভিদের গুরুত্ব:
- 1. পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা:- স্বাভাবিক উদ্ভিদ মাটি ক্ষয় রোধ করে, কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং বায়ুর মান উন্নত করে।
- 2. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ:- উদ্ভিদরাজি জীবজন্তুর আশ্রয়স্থল এবং খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে, যা প্রাকৃতিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- 3. জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ:- বনাঞ্চল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বায়ুর আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং স্থানীয় জলবায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে।
- 4. মৃত্তিকার গুণমান রক্ষা:- উদ্ভিদের শিকড় মাটির গঠন বজায় রাখে এবং পুষ্টি ধরে রাখতে সহায়ক।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ (তৃতীয় অধ্যায়) MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | HS Geography MCQ Question and Answer
1) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তিস্থল হলো—
A) উন্ন সমুদ্রপৃষ্ঠ
B) শীতল সমুদ্রপৃষ্ঠ
C) উষ্ণ ভূপৃষ্ঠ
D) বরফপৃষ্ঠ
Ans: C) উষ্ণ ভূপৃষ্ঠ
2) জেট বায়ু প্রধানত প্রবাহিত হয়—
A) ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে
B) নিম্ন ট্রপোস্ফিয়ার
C) ঊর্ধ্ব স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
D) মেসোস্ফিয়ারে
Ans: C) ঊর্ধ্ব স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
3) বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ দেখা যায় যে স্তরে
A) ট্রপোস্ফিয়ার
B) ট্রপোপজ
C) স্ট্র্যাটোপজ
D) আয়নোস্ফিয়ার
Ans: D) আয়নোস্ফিয়ার
4) মিশরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উন্ন স্থানীয় বায়ু
A) লেভেচ
B) স্যান্টা আনা
C) খামসিন
D) বোরা
Ans: C) খামসিন
5) গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ—
A) SO
B) মিথেন
C) CO2
D) O2
Ans: C) CO2
6) ঘূর্ণবাত একধরনের ____ বায়ু
A) নিয়ত
B) সাময়িক
C) আকস্মিক
D) স্থানীয় —
Ans: C) আকস্মিক
7) উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ ও নিরক্ষীয় নিম্নচাপের মধ্যে যে সঞ্চালন কোশটি আছে তার নাম হলো—
A) হ্যাডলি কোশ
B) ফেরেল কোশ
C) মেরু কোশ
D) কোনোটিই নয় ।
Ans: A) হ্যাডলি কোশ
8) ‘ফেরেল কক্ষ ‘ কোন বায়ুপ্রবাহের অন্তর্গত ?
A) পশ্চিমা বায়ু
B) মেরু বায়ু
C) আয়ন বায়ু
D) মৌসুমি বায়ু
Ans: A) পশ্চিমা বায়ু
9) ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় নির্গত গ্যাসটি হলো –
A) N²O
B) MIC
C) H²O
D) CO²
Ans: B) MIC
10) পৃথিবীর সর্বাধিক টর্নেডোর উৎপত্তি ঘটে—
A) প্রেইরি অঞ্চলে
B) চিনে
C) ভারতে
D) রাশিয়ায়
Ans: A) প্রেইরি অঞ্চলে
11. পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্যাস কোনটি?
a) অক্সিজেন
b) কার্বন ডাই অক্সাইড
c) নাইট্রোজেন
d) আর্গন
Ans: c) নাইট্রোজেন
12. কোন স্তরে ওজোন স্তর অবস্থিত?
a) ট্রপোস্ফিয়ার
b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
c) মেসোস্ফিয়ার
d) থার্মোস্ফিয়ার
Ans: b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
13. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে?
a) ট্রপোস্ফিয়ার
b) মেসোস্ফিয়ার
c) এক্সোস্ফিয়ার
d) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
Ans: a) ট্রপোস্ফিয়ার
14. আয়নমণ্ডল কোন স্তরের অংশ?
a) ট্রপোস্ফিয়ার
b) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
c) মেসোস্ফিয়ার
d) থার্মোস্ফিয়ার
Ans: d) থার্মোস্ফিয়ার
15. জেট বায়ু প্রধানত কোন স্তরে প্রবাহিত হয়?
a) ট্রপোস্ফিয়ার
b) মেসোস্ফিয়ার
c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
d) থার্মোস্ফিয়ার
Ans: c) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
16. জলবায়ু বলতে কী বোঝায়?
a) স্বল্পমেয়াদী আবহাওয়ার পরিবর্তন
b) দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার গড় অবস্থা
c) শুধুমাত্র তাপমাত্রার অবস্থা
d) শুধুমাত্র বৃষ্টিপাতের পরিমাণ
Ans: b) দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার গড় অবস্থা
17. মেরু অঞ্চলের জলবায়ুকে কী বলা হয়?
a) মরু জলবায়ু
b) উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু
c) টুন্ড্রা জলবায়ু
d) উপকূলীয় জলবায়ু
Ans: c) টুন্ড্রা জলবায়ু
|
18) ফ্রান্সের রোন উপত্যকায় প্রবাহিত শীতল স্থানীয় বায়ু হলো—
A) বোরা
B) মিস্ট্রাল
C) লেভেচ
D) সান্টা আনা
Ans: B) মিস্ট্রাল
19) ঘূর্ণবাতের চক্ষু দেখা যায়—
A) প্রতীপ
B) নাতিশীতোয়
C) ক্রান্তীয়
D) উপক্ৰান্তীয় — ঘূর্ণবাতে
Ans: C) ক্রান্তীয়
20) সেলভা জলবায়ু হলো—
A) মৌসুমি
B) নিরক্ষীয়
C) ভূমধ্যসাগরীয়
D) সাভানা
Ans: B) নিরক্ষীয়
21) প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে—
A) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
B) নিম্ন অক্ষাংশে
C) উচ্চ অক্ষাংশে
D) মধ্য অক্ষাংশে
Ans: C) উচ্চ অক্ষাংশে
22) বায়ুমণ্ডলীয় বিপর্যয়ের উদাহরণ হলো—
A) ঘূর্ণবাত
B) ভূমিকম্প
C) সুনামি
D) অগ্ন্যুৎপাত
Ans: A) ঘূর্ণবাত
23) আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস পালিত হয়
A) 5 জুন
B) 16 সেপ্টেম্বর
C) 5 আগস্ট
D) 15 ডিসেম্বর
Ans: B) 16 সেপ্টেম্বর
24) উন্ন – আর্দ্র জলবায়ুতে মাটি গঠনের হার হয়—
A) অতিধীর
B) ধীর
C) দ্রুত
D) মাঝারি
Ans: C) দ্রুত
25) বোলসন দেখতে পাওয়া যায়—
A) নেপালে
B) বাংলাদেশে
C) শ্রীলঙ্কায়
D) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে
Ans: D) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে
26) হ্যাডলি কোশের অবস্থান—
A) 0 ° –30 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
B) 30 ° –45 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
C) 45 ° –60 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
D) 80 ° –90 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
Ans: A) 0 ° –30 ° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
27. উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে কোন ধরনের জলবায়ু পাওয়া যায়?
a) শুষ্ক
b) অত্যধিক বৃষ্টিপাত
c) বরফাচ্ছন্ন
d) তাপমাত্রা অত্যন্ত কম
Ans: b) অত্যধিক বৃষ্টিপাত
28. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ কী?
a) বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি
b) সৌর বিকিরণ
c) গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন
d) জনসংখ্যা হ্রাস
Ans: c) গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন
29. জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ কিসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়?
a) ভূপ্রকৃতি
b) জনসংখ্যা
c) তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত
d) মাটির ধরন
Ans: c) তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত
30. স্বাভাবিক উদ্ভিদ কী?
a) মানুষের দ্বারা রোপিত উদ্ভিদ
b) প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উদ্ভিদ
c) শুধুমাত্র বাগানের উদ্ভিদ
d) ফলদ বৃক্ষ
Ans: b) প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উদ্ভিদ
31. ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট অঞ্চলে কী ধরনের উদ্ভিদ বেশি দেখা যায়?
a) ঘাস
b) লতাগাছ
c) বড় বড় গাছ ও ঘন বন
d) শুষ্ক মরু উদ্ভিদ
Ans: c) বড় বড় গাছ ও ঘন বন
32. মরুভূমি অঞ্চলে প্রধানত কোন ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়?
a) বড় গাছ
b) ক্যাকটাস ও কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ
c) বরফে ঢাকা গাছপালা
d) লতানো গাছ
Ans: b) ক্যাকটাস ও কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ
33. সুন্দরবন কোন ধরনের উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত?
a) রেইনফরেস্ট
b) ম্যানগ্রোভ বন
c) ঘাসভূমি
d) মরুভূমি উদ্ভিদ
Ans: b) ম্যানগ্রোভ বন
34. উপকূলীয় অঞ্চলে কোন ধরনের উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায়?
a) বরফাবৃত গাছপালা
b) ম্যানগ্রোভ ও লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ
c) উঁচু ঘাস
d) শুষ্ক উদ্ভিদ
Ans: b) ম্যানগ্রোভ ও লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ
|
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | HS Geography Short Question and Answer
1) বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে ওজোন পাওয়া যায় ?
Ans: বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ওজোন পাওয়া যায় ।
2) যে সীমান্ত বরাবর উঘ্ন বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুত্থকে ঠেলে এগিয়ে চলে তাকে কী বলে ?
Ans: উষ্ণ সীমান্ত ।
3) মিস্ট্রাল কী ?
Ans: মিস্টাল হলো শীতল স্থানীয় বায়ু যা ফ্রান্সে রোন নদীর উপত্যকা ধরে ভূমধ্যসাগরীয় নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় ।
4) ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস পায় যে প্রক্রিয়ায় তার নাম কী ?
Ans: অবরোহণ প্রক্রিয়া ।
5) প্রাকৃতিক সৌরপর্দা কাকে বলে ?
Ans: ওজোন স্তরকে ।
6) পৃথিবীর সর্বাধিক টর্নেডোপ্রবণ অঞ্চল কোনটি ?
Ans: যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি – মিসৌরি নদীর মোহনা ।
7) বায়ুমণ্ডলে CO, বৃদ্ধির প্রধান উৎস কী ?
Ans: জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ।
8) টর্নেডো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কী নামে পরিচিত ?
Ans: টর্নেডো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ টুইস্টার ‘ নামে পরিচিত ।
9) Hing We ঝড়ের চক্ষু কাকে বলে ?
Ans: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের বৃত্তাকার কেন্দ্রটিকে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে । এর ব্যাস প্রায় 30-65 কিলোমিটার হয় ।
10) CFC কী ?
Ans: এটি একটি গ্রিনহাউস গ্যাস । পুরো নাম ক্লোরোফ্লুরোকার্বন । এই গ্যাস ওজোন স্তরের হ্রাস ঘটায় ।
11) সুনামি কী ?
Ans: সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্পের ফলে যে বিশালাকৃতি বিধ্বংসী সামুদ্রিক ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ে তাকে জাপানে সুনামি বলে ।
12) প্রাকৃতিক সৌরপর্দা কাকে বলা হয় ?
Ans: পৃথিবীর জীবজগৎকে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ছাতার মতো রক্ষা করে বলে ওজোন স্তরকে পৃথিবীর ‘ প্রাকৃতিক সৌরপর্দা ‘ বলে ।
13) বায়ু সঞ্চালন সম্পর্কিত ত্রিকোশ তত্ত্বের প্রবক্তা কে ?
Ans: বিজ্ঞানী পলম্যান বায়ু সঞ্চালন সম্পর্কিত ত্রিকোশ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন ।
14) ‘ডোলড্রাম ‘ অঞ্চল কাকে বলে ?
Ans: প্রশাস্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের ITCZ অঞ্চল দিয়ে জাহাজ অতিধীরে অতিক্রম করত বলে নাবিকগণ এর নামকরণ করেন ‘ ডোলড্রাম ‘।
15) ওজোন স্তরে কোন রশ্মি শোষিত হয় ?
Ans: ওজোন স্তরে সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক Ultra Violet Ray বা অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হয় ।
16) এল নিনোর উৎপত্তি কোথায় ঘটে ?
Ans: ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে পেরু , ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূলে এল নিনোর উৎপত্তি ঘটে ।
|
17) ‘হ্যাডলি কোশের ‘ অপর নাম কী ?
Ans: হ্যাডলি কোশের অপর নাম ‘ প্রত্যক্ষ তাপীয় কোশ ‘।
18) কোন প্রকার ঘূর্ণবাতে আবহাওয়া সর্বদা শাস্ত থাকে ?
Ans: প্রতীপ ঘূর্ণবাতে আবহাওয়া সর্বদা শান্ত থাকে ।
19) বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্যাস কোনটি?
Ans: নাইট্রোজেন
20) ওজোন স্তর কোথায় অবস্থিত?
Ans: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
21) বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে?
Ans: ট্রপোস্ফিয়ার
22) জেট বায়ু কোন স্তরে প্রবাহিত হয়?
Ans: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
23) আয়নমণ্ডল কোন স্তরের অংশ?
Ans: থার্মোস্ফিয়ার
24) জলবায়ু বলতে কী বোঝায়?
Ans: দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার গড় অবস্থা
25) মেরু অঞ্চলের জলবায়ুকে কী বলা হয়?
Ans: টুন্ড্রা জলবায়ু
26) উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে কোন ধরনের জলবায়ু পাওয়া যায়?
Ans: অত্যধিক বৃষ্টিপাত
27) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ কী?
Ans: গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন
28) জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ কিসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়?
Ans: তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত
29) স্বাভাবিক উদ্ভিদ কী?
Ans: প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উদ্ভিদ
30) ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট অঞ্চলে কী ধরনের উদ্ভিদ বেশি দেখা যায়?
Ans: বড় বড় গাছ ও ঘন বন
31) মরুভূমি অঞ্চলে প্রধানত কোন ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়?
Ans: ক্যাকটাস ও কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ
32) সুন্দরবন কোন ধরনের উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত?
Ans: ম্যানগ্রোভ বন
33) উপকূলীয় অঞ্চলে কোন ধরনের উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায়?
Ans: ম্যানগ্রোভ ও লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ
|
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল – বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1) আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর জেট বায়ুপ্রবাহের প্রভাব বিশ্লেষণ করো -
জেট বায়ুপ্রবাহ(Jet Stream) হলো বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরে প্রবাহিত খুবই দ্রুতগামী বাতাসের একটি সংকীর্ণ প্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ সাধারণত ৯-১৬ কিমি উচ্চতায় (ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মাঝামাঝি) প্রবাহিত হয় এবং এর গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০-৪০০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে। জেট বায়ুপ্রবাহ আবহাওয়া ও জলবায়ুতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
জেট বায়ুপ্রবাহের প্রভাব:
i. আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন:
- জেট বায়ুপ্রবাহের প্রভাব সাধারণত নিম্নচাপ ও উচ্চচাপ অঞ্চলে অনুভূত হয়। এটি নিম্নচাপের ঝড়ো আবহাওয়া এবং উচ্চচাপের স্থিতিশীল আবহাওয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- যখন জেট বায়ুপ্রবাহ নিম্নচাপের কাছাকাছি চলে, তখন তা বাতাসের গতিপথে প্রভাব ফেলে, যার ফলে ঝড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। অন্যদিকে, যখন এটি উচ্চচাপের কাছাকাছি থাকে, তখন স্থিতিশীল আবহাওয়া এবং রৌদ্রোজ্জ্বল দিন দেখা যায়।
ii. মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের গতি:
- জেট বায়ুপ্রবাহ মৌসুমি আবহাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বর্ষা এবং ঝড়ের প্রবাহের গতিপথ এবং গতি নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষত, দক্ষিণ এশিয়ার বর্ষা মৌসুমে, জেট বায়ুপ্রবাহের স্থানচ্যুতি বৃষ্টিপাতের সময় এবং মাত্রা নির্ধারণ করে।
- এটি বড় ঝড়ের গতিবিধি পরিবর্তন করে এবং ঝড়কে নির্দিষ্ট অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব দিতে পারে, যার ফলে ঝড়টি আরও মারাত্মক আকার নিতে পারে।
iii. তাপমাত্রার তারতম্য:
- জেট বায়ুপ্রবাহ একটি সীমানা হিসেবে কাজ করে শীতল এবং উষ্ণ বায়ুর মধ্যে। এটি যখন দক্ষিণে নেমে আসে, তখন শীতল বায়ু নিম্ন অক্ষাংশের দিকে প্রবাহিত হয়, যার ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। একইভাবে, উত্তরে ওঠার সময় এটি উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে নিয়ে যায়, ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- এর ফলে তাপপ্রবাহ ও শীতল প্রবাহের সৃষ্টি হয়, যা গ্রীষ্মে অতিরিক্ত গরম এবং শীতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণ হতে পারে।
iv. মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক জলবায়ুতে প্রভাব:
- জেট বায়ুপ্রবাহ মহাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চল এবং সমুদ্রের উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে। এটি স্থলভাগে শুষ্ক আবহাওয়ার সৃষ্টি করে এবং উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- এর ফলে মরু অঞ্চলে শুষ্ক জলবায়ু এবং উপকূলীয় অঞ্চলে আর্দ্র জলবায়ু দেখা যায়।
v. বিমানের রুট ও সময়ে প্রভাব:
জেট বায়ুপ্রবাহ বিমানের রুট এবং যাত্রার সময়েও প্রভাব ফেলে। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যাতায়াতকারী বিমানগুলো জেট বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে সময় বাঁচাতে পারে, কারণ এয়ারক্রাফটগুলো জেট স্ট্রিমের পক্ষে উড়ে গতি বাড়ায়। তবে বিপরীতমুখী হলে যাত্রার সময় দীর্ঘ হয়।
জেট বায়ুপ্রবাহ আবহাওয়া ও জলবায়ুর গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, যা তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ের গতি-প্রকৃতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এর গতিপথ এবং গতিবেগ নির্ভর করে পৃথিবীর ঘূর্ণন, সূর্যের তাপ এবং ভূমির উঁচু-নিচু অবস্থার ওপর। জেট বায়ুপ্রবাহের প্রভাবকে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ধারণ করা যায়, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক।
2) রসভি (Rossby Waves) তরঙ্গ কাকে বলে ?
রসভি তরঙ্গ (Rossby Waves) হলো বায়ুমণ্ডলের মধ্যে সঞ্চালিত বড় আকারের তরঙ্গ, যা পৃথিবীর আবর্তন এবং অসম তাপমাত্রার কারণে সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গগুলো উচ্চ অক্ষাংশে বায়ুপ্রবাহকে নির্দেশ করে এবং মেরু ও ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য দায়ী। রসভি তরঙ্গগুলো বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরে, বিশেষ করে ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের দিকে, এবং মহাসাগরের সঞ্চালন ব্যবস্থায় দেখা যায়।
রসভি তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য:
- i. উৎপত্তি: পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং কোরিওলিস বলের কারণে এই তরঙ্গগুলো সৃষ্টি হয়।
- ii. আকার: রসভি তরঙ্গ সাধারণত কয়েক হাজার কিলোমিটার প্রশস্ত হয় এবং উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ বরাবর স্থানান্তরিত হয়।
- iii. বায়ুমণ্ডলীয় প্রভাব: রসভি তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে উচ্চ ও নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি করে, যার ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তিত হয়।
রসভি তরঙ্গের প্রভাব:
- i. এই তরঙ্গগুলির কারণে শীতকালে তীব্র শীতের প্রবাহ এবং গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ হতে পারে।
- ii. এটি জলবায়ু এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলোর একটি, বিশেষত আঞ্চলিক তাপমাত্রার পার্থক্য এবং বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটাতে পারে।
রসভি তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলের জটিল সঞ্চালন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা জলবায়ু এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
3) অনিয়মিত বা আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে?
অনিয়মিত বা আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ বলতে বোঝায় এমন বায়ুপ্রবাহ যা স্বাভাবিক বা নিয়মিত বায়ুপ্রবাহের বিপরীতে আকস্মিকভাবে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে থাকে। এই ধরনের বায়ুপ্রবাহ সাধারণত অল্প সময়ের জন্য সঞ্চালিত হয় এবং বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলের স্থানীয় অঞ্চলে দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হয়। এগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা দেয়।
অনিয়মিত বা আকস্মিক বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য:
- i. আকস্মিকতা: এই বায়ুপ্রবাহ হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং সাধারণত এর পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে থাকে।
- ii. স্বল্পমেয়াদী: এই ধরনের বায়ুপ্রবাহ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব ফেলে।
- iii. দ্রুত গতি: অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ সাধারণত খুব দ্রুত হয়, যা ঝড়ো হাওয়া বা ঘূর্ণিঝড়ের মত অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
- iv. স্থানীয় প্রভাব: এটি নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে বা ছোট এলাকায় ঘটে থাকে এবং স্থানীয় আবহাওয়ার তীব্র পরিবর্তন ঘটায়।
উদাহরণ:
- i. টর্নেডো বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বায়ুপ্রবাহ হঠাৎ দ্রুত হয়ে ওঠে।
- ii. বজ্রঝড়ের সময় আকস্মিকভাবে বাতাসের গতি বেড়ে যায়।
- iii. ঠাণ্ডা ফ্রন্ট এবং গরম ফ্রন্টের সংস্পর্শে এসে বায়ুপ্রবাহের গতিপথ ও তীব্রতা হঠাৎ পরিবর্তিত হতে পারে।
কারণ:
- i. তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন
- ii. নিম্নচাপ ও উচ্চচাপের মধ্যকার তীব্র পার্থক্য
- iii. বজ্রঝড় বা চক্রবাতের মতো আবহাওয়া পরিস্থিতি
এই ধরনের বায়ুপ্রবাহ দ্রুতগতির এবং প্রায়ই বিপজ্জনক হতে পারে, যা আবহাওয়া পরিবর্তনের তীব্রতার কারণে সৃষ্ট হয়।
4) অনিয়মিত বা আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ কখন সৃষ্টি হয় ?
অনিয়মিত বা আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয়। এই বায়ুপ্রবাহগুলো স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহের থেকে ভিন্ন হয়, এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটতে পারে। এগুলো নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়:
১. তাপমাত্রার আকস্মিক পার্থক্য:
- যখন দুটি ভিন্ন তাপমাত্রার বায়ুস্তরের মধ্যে বড় পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তখন অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। বিশেষত, শীতল বায়ু ও উষ্ণ বায়ুর মিশ্রণে আকস্মিক ঝড়ো হাওয়া সৃষ্টি হয়।
- যেমন: ঠাণ্ডা ফ্রন্ট বা গরম ফ্রন্টের ক্ষেত্রে।
২. নিম্নচাপ এবং উচ্চচাপ অঞ্চল:
- নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ু দ্রুতভাবে কুণ্ডলী পাকিয়ে উপরে উঠতে থাকে এবং চারপাশ থেকে বায়ু এই শূন্যস্থান পূরণ করতে ঢোকে। এতে আকস্মিক বাতাসের গতি বাড়তে থাকে।
- উচ্চচাপ অঞ্চলে বায়ু ছড়িয়ে পড়ার জন্য বায়ুপ্রবাহের গতি বাড়তে পারে।
- যেমন: চক্রবাত এবং বাত্যাচক্র।
৩. বজ্রঝড়ের সময়:
- বজ্রঝড়ের সময় দ্রুতগতির উল্লম্ব বায়ুপ্রবাহ দেখা যায়, যা আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে আকস্মিক ঝড়ো হাওয়া এবং দমকা বাতাস সৃষ্টি হয়।
- যেমন: থান্ডারস্টর্ম।
৪. পর্বতের বায়ুপ্রবাহ:
- যখন শীতল বায়ু দ্রুতগতিতে কোনো পর্বতের ঢাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে আসে, তখন অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ দেখা দেয়। এটি পর্বত অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় আকস্মিক হাওয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
- যেমন: ফোয়েন বা চিনুক বায়ুপ্রবাহ।
৫. টর্নেডো এবং ঘূর্ণিঝড়:
- টর্নেডো এবং ঘূর্ণিঝড়ের সময় অত্যন্ত তীব্র বায়ুপ্রবাহ দেখা যায়, যা দ্রুত গতিতে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এটি অত্যন্ত আকস্মিক এবং ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
৬. জেট বায়ুপ্রবাহের স্থানচ্যুতি:
- যখন জেট বায়ুপ্রবাহ তার গতিপথ পরিবর্তন করে বা এর স্থানচ্যুতি ঘটে, তখন এর ফলে বায়ুমণ্ডলে আকস্মিক বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। এটি বিশেষত মাঝারি ও উচ্চ অক্ষাংশের অঞ্চলে তাপমাত্রার বড় তারতম্য ঘটায়।
অনিয়মিত বা আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ সাধারণত বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য, নিম্নচাপ-উচ্চচাপের পার্থক্য, এবং বজ্রঝড় বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো চরম আবহাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। এই ধরনের বায়ুপ্রবাহ আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে সহায়ক।
5) এল নিনোর কি? এল নিনোর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো ?
এল নিনো হলো একটি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক ঘটনা, যা নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘটে এবং বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এটি প্রতি ২ থেকে ৭ বছরে একবার ঘটে এবং সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এল নিনো মূলত সমুদ্রের উষ্ণ জল ও বাতাসের সঞ্চালনের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়।
পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কাকে বলে ও ‘ মনসুন ট্রাফ ’ এল নিনো হলো একটি স্প্যানিশ শব্দ যার অর্থ হলো ছোট্ট ছেলে । প্রায় 100 বছর আগে পেরুর জেলেদের চোখে প্রথম এই স্রোেত ধরা পড়ে এবং সেই থেকে এই নামকরণ । প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে পেরু উপকূল দিয়ে যে দক্ষিণমুখী উয় স্রোত প্রবাহিত হয় তাকে এল নিনো বলে ।
এল নিনোর উৎপত্তি:
1. বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন:
- সাধারণত, নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বাতাস প্রবাহিত হয়, যাকে প্যাসিফিক ট্রেড উইন্ডস বলা হয়। এই বাতাস দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উষ্ণ জলকে ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঠেলে দেয়।
- এল নিনো ঘটার সময় এই ট্রেড উইন্ডস দুর্বল হয়ে যায় বা সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে প্রবাহিত হতে থাকে, যার ফলে উষ্ণ জল পূর্ব দিকে, দক্ষিণ আমেরিকার দিকে ফিরে আসে।
2. উষ্ণ জলের সঞ্চালন:
- ট্রেড উইন্ডস দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে (দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে) উষ্ণ জল জমা হতে শুরু করে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।
- এই উষ্ণ জল স্থলভাগের আবহাওয়া এবং বায়ুমণ্ডলের ওপর প্রভাব ফেলে।
3. বায়ুমণ্ডলের প্রতিক্রিয়া:
- সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বায়ুপ্রবাহের গতিপথে পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যায়, কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের অন্য প্রান্তে (ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া) খরা দেখা দেয়।
- এল নিনোর সময়ে নিম্নচাপ অঞ্চল দক্ষিণ আমেরিকার দিকে সরে যায় এবং সেখানে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে, যার ফলে বন্যা হতে পারে।
4. মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তন:
- সমুদ্রের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর স্বাভাবিক ধারা পরিবর্তিত হয়। এল নিনোর কারণে আঞ্চলিক পর্যায়ে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের প্রভাব অনেকটাই বাড়তে পারে।
- যেমন: দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় খরা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত।
এল নিনোর প্রভাব:
- দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি এবং বন্যা।
- ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় খরা।
- সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি, যার ফলে মাছের সংখ্যা হ্রাস এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব।
- বৈশ্বিকভাবে তাপমাত্রার বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনা।
এল নিনো একটি বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের ঘটনা, যা নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জল ও বায়ুপ্রবাহের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে সৃষ্টি হয়। এটি বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে এবং এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে খরা, বন্যা, এবং সমুদ্রের উষ্ণতা বেড়ে যেতে পারে।
6) মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তির পর্যায়গুলি বর্ণনা করো ।
নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টির পর্যায় নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—
- i) প্রাথমিক পর্যায় ( সাম্য সীমান্ত গঠন ) :- মেরু অঞ্চল থেকে শীতল বায়ুপুর ও ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত উন্ন বায়ুপুঞ্জ পরস্পরের সমান্তরালে বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়ে সাম্য সীমান্ত গঠন করে ।
- ii) দ্বিতীয় পর্যায় ( উয় ও শীতল সীমান্তের সৃষ্টি ) :- শীতল বায়ুপুঞ্জ উয় বায়ুপুঞ্জের অভিমুখে এবং উয় বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জের অভিমুখে এগিয়ে গেলে উয় বায়ুর পেছনের অংশে শীতল সীমান্ত এবং শীতল বায়ুর পেছনের অংশে উয় সীমান্ত গঠিত হয়ে থাকে ।
- iii) তৃতীয় পর্যায় ( বাততরঙ্গের বিকাশ ) :- সাম্য সীমান্ত বরাবর উয় বায়ুপুঞ্জ ও শীতল বায়ুপুঞ্জের সংঘর্ষের ফলে উহ্ণ বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জের মধ্যে ঢুকে পড়ে । এতে বাততরঙ্গের উদ্ভব হয় ।
- iv) চতুর্থ পর্যায় ( ঘূর্ণবাতের প্রাবল্য ) :- শীতল বায়ুপুঞ্জ উয় বায়ুপুঞ্জের পেছনে ধাক্কা মেরে উয় – আর্দ্র বায়ুকে মেরু অঞ্চল অভিমুখে অভিক্ষিপ্ত হতে বাধ্য করে এবং মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ু উয় – আর্দ্র বায়ুটিকে ঘিরে ফেলে ।
- v) পঞ্চম পর্যায় ( অক্লুডেড সীমান্ত ) :- শীতল বায়ুসীমান্ত উয় সীমান্তের অভিমুখে দ্রুত বেগে এগিয়ে এলে অনায়াসে একটি বক্রাকার সীমান্ত বরাবর উয় সীমান্তের সংস্পর্শে আসে । এই ধরনের বক্রাকার সীমান্তকে অক্লুডেড সীমান্ত বলে ।
- vi) অস্তিম পর্যায় : এই পর্যায়ে অক্লুডেড সীমান্ত বরাবর উষ্ম বায়ুপুঞ্জটি শীতল বায়ুপুঞ্জের দ্বারা পরিবৃত হয় । ফলে মূল বায়ুপুঞ্জ থেকে আলাদা হয়ে যায় । তাপমাত্রা অত্যধিক কমে যাওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরে অতিশীতল মেঘের সৃষ্টি হয় , যাকে ‘ পোলার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক ক্লাউড ’ ( PSC ) বা মেরুদেশীয় ‘ শাস্তমণ্ডলীয় মেঘ ‘ বলে ।
7) PSC কী ? / পোলার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক ক্লাউডস (Polar Stratospheric Clouds - PSCs) কী ?
পোলার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক ক্লাউডস (Polar Stratospheric Clouds - PSCs), যেগুলি মুক্তো মেঘ (Nacreous Clouds) নামেও পরিচিত, হল একধরনের মেঘ যা পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মেরু অঞ্চলগুলিতে (আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক) উচ্চতা প্রায় ১৫-২৫ কিলোমিটার (৯-১৬ মাইল) পর্যন্ত দেখা যায়। এই মেঘগুলি অত্যন্ত ঠান্ডা তাপমাত্রায় (-78°C এর নিচে) গঠিত হয় এবং সাধারণত শীতকালে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
- i. গঠন: PSC মেঘগুলি সাধারণত জলবাষ্প, নাইট্রিক অ্যাসিড, এবং সালফিউরিক অ্যাসিডের ক্ষুদ্র বরফ কণা দ্বারা গঠিত হয়।
- ii. রঙ: এদের একটি স্বতন্ত্র মুক্তোর মতো রঙ থাকে, যা সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় বিশেষভাবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সূর্যের আলো এদের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে নানা রঙের খেলা তৈরি করে।
- iii. সংশ্লিষ্ট সমস্যা: পোলার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক ক্লাউডগুলি ওজোন স্তরের ক্ষয়ের সাথে যুক্ত। এগুলি এমন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে, যা ক্লোরিন এবং ব্রোমিন যৌগগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। এরা ওজোন স্তর ধ্বংস করতে ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে ওজোন গর্ত তৈরিতে সহায়ক হয়।
- iv. অবস্থান: সাধারণত মেরু অঞ্চলগুলির শীতলতম অংশে, বিশেষ করে অ্যান্টার্কটিকা এবং আর্কটিক অঞ্চলে দেখা যায়। তবে মাঝে মাঝে মাঝারি অক্ষাংশে শীতকালে খুব কম সংখ্যায় দেখা যেতে পারে।
শ্রেণিবিভাগ:
PSCs দুইটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত:
- i. টাইপ I PSCs: মূলত নাইট্রিক অ্যাসিড এবং পানি দিয়ে গঠিত। এরা ওজোন স্তরের ক্ষয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
- ii. টাইপ II PSCs: পানি বরফ দিয়ে তৈরি, এবং শুধুমাত্র অত্যন্ত ঠান্ডা পরিবেশে দেখা যায়।
Polar Stratospheric Clouds এর বিজ্ঞান বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ওজোন স্তরের অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ প্রদান করে।
8) মৌসুমি বায়ুর উপর এল নিনোর প্রভাব বর্ণনা করো ।
মৌসুমি বায়ুর ওপর এল নিনোর প্রভাব : উপমহাদেশে মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি প্রসঙ্গে আধুনিকতম তত্ত্বটি হলো ENSO তত্ত্ব । এতে বলা হয়েছে , উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে নিরক্ষরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে পূর্ব – পশ্চিমে বিস্তৃত কয়েকটি ওয়াকার কক্ষ থাকে । ওয়াকার কক্ষগুলির সঙ্গে এল নিনো , দক্ষিণী দোলন এবং মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক আছে । এই ওয়াকার কক্ষগুলি যে বছরে স্বাভাবিক পরিচলন ক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুপ্রবাহকে সক্রিয় রাখে , সেই পর্বকে ওয়াকার কক্ষের স্বাভাবিক ও শক্তিশালী অবস্থা বলে ।
এই পর্যায়ে চারটি বৃহৎ নিম্নচাপ বিশিষ্ট ওয়াকার কক্ষ দেখা যায় । যথা—
- i) আমাজন অঞ্চল
- ii) মধ্যআফ্রিকা
- iii) ভারত
- v) ইন্দোনেশিয়া ।
ফলে এই চারটি অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে । ভারতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে স্বাভাবিক সময়ে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে । আবার একই সময়ে চারটি নিম্নচাপ কক্ষের পাশাপাশি তিনটি উচ্চচাপ কক্ষেরও সৃষ্টি হয় । যথা—
- i) পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর
- ii) পশ্চিম ভারত মহাসাগর
- iii) দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর ।
এর প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে নিম্নচাপের পরিবর্তে গ্রীষ্মকালে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় । এর ফলে ভারতে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেরিতে আসে । দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু থেকে অন্তত 10 শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয় । ফলে খরার সৃষ্টি হয় ।
9) জলবায়ু পরিবর্তনের মনুষ্যসৃষ্ট তিনটি প্রধান কারণ লেখো ।
মানুষের নানা অবিবেচনামূলক ক্রিয়াকলাপের ফলে ওজোন স্তর ক্ষয় , গ্রিনহাউস এফেক্ট ও বিশ্ব উয়ায়নের প্রভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে । যথা—
- i) জীবাশ্ম জ্বালানির দহন :- সমগ্র বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির শিল্প – কলকারখানা , যানবাহন , তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন , রান্নার কাজে , খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস যথেচ্ছভাবে ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই – অক্সাইড – এর পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় পরোক্ষ ভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে ।
- ii) অরণ্যচ্ছেদন : -বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে ক্রমাগত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে যথা কৃষি , শিল্প , রাস্তাঘাট , বসতি নির্মাণের জন্য অরণ্যচ্ছেদন চলছে । ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই – অক্সাইডের পরিমাণ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় জলবায়ুর পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে ।
- iii) কৃষিকাজ :- মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দ্রুত ও উচ্চ ফলনশীল শস্য চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে ফলে NH , CH , N , O গ্যাস বৃদ্ধি পায় ৷ এগুলিও জলবায়ু পরিবর্তনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে ।
10) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাতের কারণ কী ?
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু (Mediterranean Climate) বিশেষভাবে শীতকালে অধিকাংশ বৃষ্টিপাতের জন্য পরিচিত। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
A. উচ্চ চাপ অঞ্চল এবং নিম্ন চাপ অঞ্চলের পরিবর্তন:
- i) উচ্চ চাপ অঞ্চল:- গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে একটি স্থিতিশীল উচ্চ চাপ অঞ্চল গঠন হয়। এই উচ্চ চাপ অঞ্চল আকাশ পরিষ্কার রাখে এবং গ্রীষ্মকালীন সময়ে বৃষ্টিপাত কমিয়ে দেয়।
- ii) নিম্ন চাপ অঞ্চল:- শীতকালে, উচ্চ চাপ অঞ্চল স্থানান্তরিত হয়ে নিম্ন চাপ অঞ্চল সৃষ্টি হয়, যা ভিজা এবং অশান্ত আবহাওয়ার সাথে সম্পর্কিত। এই নিম্ন চাপ অঞ্চলগুলি বাতাসকে ঠান্ডা এবং আর্দ্র করে, ফলে শীতকালে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পায়।
B. বিভিন্ন মৌসুমি বাতাসের প্রভাব:
- i) শীতকালে, সাইবেরিয়ান উচ্চ চাপ অঞ্চল এবং ট্রপিক্যাল নিম্ন চাপ অঞ্চলের মধ্যে চাপের পার্থক্যের কারণে পশ্চিমী বাতাস প্রবাহিত হয়। এই বাতাস ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আর্দ্রতা নিয়ে আসে এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়।
C. ভূমধ্যসাগরের প্রভাব:
- i) ভূমধ্যসাগরের তাপমাত্রা শীতকালে কম হলেও, এটি সাগরের কাছাকাছি অঞ্চলে আর্দ্র বাতাস প্রদান করে। এই আর্দ্র বাতাস ঠান্ডা বায়ুর সাথে মিশে গিয়ে বৃষ্টির সৃষ্টি করে।
D. শীতকালে কম্পনশীলতা বৃদ্ধি:
- i) শীতকালে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে স্থল এবং সমুদ্রের তাপমাত্রার মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা দেয়। স্থল দ্রুত ঠান্ডা হয় কিন্তু সমুদ্র তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এই তাপমাত্রার পার্থক্য শীতকালে আরো বেশি বৃষ্টিপাতের সুযোগ করে দেয়।
এই উপাদানগুলো মিলিতভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে শীতকালে অধিকাংশ বৃষ্টিপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
11) জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলি আলোচনা করো ।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রধানত দুটি প্রকারে বিভক্ত: প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট। এখানে আমরা মূলত মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোর ওপর আলোচনা করব, যেগুলি জলবায়ুর বর্তমান পরিবর্তনের জন্য প্রধানভাবে দায়ী।
A) মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ:
1. গ্রীনহাউস গ্যাসের নির্গমন:
- কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂):- জীবাশ্ম জ্বালানী (কোইল, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার, বন উজাড় এবং সিমেন্ট উৎপাদনের ফলে CO₂ নিঃসৃত হয়। CO₂ পৃথিবীর গ্রীনহাউস প্রভাব বাড়িয়ে দেয়, যা গ্লোবাল উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
- মিথেন (CH₄):- গরু পালন, রিস্কপেড (চাষের জমিতে পদ্ধতিগত পানি), এবং গ্যাস লিকেজ থেকে মিথেন নির্গত হয়। মিথেন CO₂ এর চেয়ে গ্রীনহাউস গ্যাস হিসেবে শক্তিশালী।
- নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O):- কৃষি ক্ষেত্রে সার ব্যবহারের ফলে নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এটি গ্রীনহাউস গ্যাস হিসেবে কাজ করে।
2. বন উজাড় এবং ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন:
- বন উজাড়: গাছপালা CO₂ শোষণ করে, কিন্তু বন উজাড়ের ফলে CO₂ শোষণ ক্ষমতা কমে যায় এবং অতিরিক্ত CO₂ বায়ুমণ্ডলে থাকে।
- ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন: কৃষি, নগরায়ণ, এবং অন্যান্য ব্যবহারের জন্য ভূমির পরিবর্তন জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত।
3. শিল্পকলা এবং পরিবহন:
- দূষণ:- শিল্প উৎপাদন এবং পরিবহন সেক্টরে নির্গত দূষণকারী পদার্থ যেমন সালফার ডাইঅক্সাইড (SO₂), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে। এই পদার্থগুলো বায়ুমণ্ডলে অ্যাসিড বৃষ্টি ও অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি করে।
- ফ্লোরোসেন্ট গ্যাস:- ফ্লোরোকার্বন, হ্যালন, এবং অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসগুলো গ্রীনহাউস প্রভাব বাড়ায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়।
4. মিথেনের উৎস এবং তার পরিবহন:
- ডাম্পিং এবং ময়লা ফেলা: ডাম্পিং সাইটে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয়ে গ্রীনহাউস প্রভাব বাড়ায়।
B) প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ:
- i. ভলকানিক কার্যক্রম:- বৃহৎ ভলকানিক অগ্ন্যুৎপাত CO₂ এবং অন্যান্য গ্রীনহাউস গ্যাস মুক্ত করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
- ii. সূর্যের তাপমাত্রার পরিবর্তন:- সূর্যের তাপমাত্রার পরিবর্তনও পৃথিবীর জলবায়ুতে প্রভাব ফেলতে পারে, যদিও এটি সাধারণত ছোট পরিসরে হয়।
- iii. প্রাকৃতিক জলবায়ু চক্র:- যেমন এল নিনো এবং লা নিয়ার মত প্রাকৃতিক জলবায়ু চক্র জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে পারে।
- iv. বৈশ্বিক আবহাওয়া চক্রের পরিবর্তন:- দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়া চক্রের পরিবর্তন যেমন মহাদেশীয় শীতল বা উষ্ণকরণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি জলবায়ুর উষ্ণায়ন, বরফের গলন, সমুদ্র স্তরের বৃদ্ধির, এবং অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি করছে, যা বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিকভাবে প্রভাব ফেলছে। এই প্রভাবগুলি কৃষি, পানীয় জল সরবরাহ, এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর ব্যাপক পরিবর্তন আনছে।
12) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক ও শীতকাল আর্দ্র হওয়ার কারণ কী ?
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক এবং শীতকাল আর্দ্র হওয়ার কারণগুলো হলো:
1. উচ্চ চাপ এবং নিম্ন চাপের পার্থক্য:
- গ্রীষ্মকাল:- গ্রীষ্মকালে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে একটি স্থায়ী উচ্চ চাপ অঞ্চল (সর্বোচ্চ চাপের অঞ্চল) তৈরি হয়। এই উচ্চ চাপ অঞ্চল আকাশ পরিষ্কার রাখে এবং বাতাসের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, ফলে বৃষ্টিপাত কম হয়। এছাড়া, শুষ্ক বাতাস দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসে যা উষ্ণ এবং আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।
- শীতকাল:- শীতকালে, উচ্চ চাপ অঞ্চলটি স্থানান্তরিত হয় এবং নিম্ন চাপ অঞ্চল তৈরি হয়। এই নিম্ন চাপ অঞ্চল আর্দ্র বাতাস নিয়ে আসে, যা বৃষ্টির সৃষ্টি করে। শীতকালে পশ্চিমী বাতাস ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রবাহিত হয়, যা সমুদ্র থেকে আর্দ্রতা নিয়ে আসে।
2. সমুদ্রের প্রভাব:
- গ্রীষ্মকাল:- ভূমধ্যসাগরের তাপমাত্রা শীতকালে তুলনায় বেশি থাকে, তবে গ্রীষ্মকালে, ভূমধ্যসাগরের পানি ঠান্ডা হওয়ার পরিবর্তে দ্রুত গরম হয় এবং বাতাসের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে করে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায় এবং বৃষ্টিপাত কমে যায়।
- শীতকাল:- শীতকালে, ভূমধ্যসাগরের পানি তুলনামূলকভাবে উষ্ণ থাকে, যা বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে। এই আর্দ্র বাতাস কুলিং প্রক্রিয়ায় পরিণত হয় এবং বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে।
3. মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তন:
- গ্রীষ্মকাল:- গ্রীষ্মকালে, ভূমধ্যসাগরের উপর থেকে উত্তরের ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে, উত্তরের শুষ্ক বাতাস গ্রীষ্মের সময়ে প্রাধান্য পায়।
- শীতকাল:- শীতকালে, মৌসুমি বায়ু পরিবর্তিত হয় এবং পশ্চিমের আর্দ্র বাতাস প্রবাহিত হয়, যা ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে চলে আসে এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়।
4. মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক প্রভাব:
- গ্রীষ্মকাল:- মহাদেশীয় এলাকা গরম হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়।
- শীতকাল:- মহাদেশীয় তাপমাত্রা কমে যায়, এবং ভূমধ্যসাগরের উষ্ণ পানি আর্দ্র বাতাস তৈরি করে যা শীতকালে বৃষ্টিপাতের কারণ হয়।
এই কারণগুলো মিলিতভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং আর্দ্র শীতকাল সৃষ্টি করে।
13) হাইড্রোফাইটের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য লেখো
হাইড্রোফাইট (Hydrophyte) হলো এমন উদ্ভিদ, যেগুলো পানির ভেতর বা পানির কাছাকাছি পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এদের অভিযোজনগুলো পানিতে জীবনধারণের উপযোগীভাবে তৈরি হয়েছে। হাইড্রোফাইটের অভিযোজনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
1. পাতার গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
- পাতা পাতলা ও প্রশস্ত:- হাইড্রোফাইটের পাতাগুলো সাধারণত প্রশস্ত এবং পাতলা হয়, যা বেশি পরিমাণে সূর্যালোক গ্রহণ করে। এটি তাদের দ্রুত ফটোসিন্থেসিস করতে সাহায্য করে।
- মোমের স্তর:- পাতার ওপরে সাধারণত মোমের আবরণ থাকে, যা পানির সাথে অতিরিক্ত সংস্পর্শ থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করে এবং পানির বাষ্পীভবন নিয়ন্ত্রণ করে।
- স্টোমাটার অবস্থান:- হাইড্রোফাইটের স্টোমাটা (রন্ধ্র) সাধারণত পাতার উপরের পৃষ্ঠে থাকে, যা জলজ পরিবেশে গ্যাসের আদান-প্রদানে সহায়তা করে। অনেক ক্ষেত্রে স্থল উদ্ভিদের মতো পাতার নিচে স্টোমাটা থাকে না।
2. কান্ডের বৈশিষ্ট্য:
- কান্ড নরম ও মজবুত নয়:- হাইড্রোফাইটের কান্ডগুলো সাধারণত নরম এবং স্পঞ্জের মতো হয়। এর ফলে তারা সহজে ভেসে থাকতে পারে।
- এ্যারেনকাইমা (Aerenchyma):- হাইড্রোফাইটের কান্ড এবং পাতায় অনেক বায়ুথলি থাকে, যা এ্যারেনকাইমা নামক কোষীয় টিস্যু দিয়ে গঠিত। এই টিস্যুগুলো উদ্ভিদকে পানিতে ভাসতে সাহায্য করে এবং গ্যাসের আদান-প্রদান সহজ করে।
3. শিকড়ের গঠন ও ভূমিকা:
- শিকড় ছোট ও কম গভীর:- অধিকাংশ হাইড্রোফাইটের শিকড় ছোট এবং মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, কারণ তাদের মাটি থেকে খনিজ বা পানি সংগ্রহের খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি তারা পানির মধ্য থেকেই সংগ্রহ করতে পারে।
- আবরণহীন শিকড়:- অনেক হাইড্রোফাইটের শিকড়ের মোমের বা লোমের আবরণ থাকে না, কারণ শুষ্ক পরিবেশের মতো পানি সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
4. গ্যাসের আদান-প্রদান:
- বায়ুথলি (Air Spaces):- হাইড্রোফাইটের অভ্যন্তরীণ কোষের মধ্যে বায়ুথলি থাকে, যা উদ্ভিদকে পানির ওপরে ভাসতে সাহায্য করে এবং অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে। উদাহরণ হিসেবে পদ্মপাতার ভেতরে থাকা বায়ুথলির কথা উল্লেখ করা যায়।
5. অভ্যন্তরীণ বায়ু সরবরাহ:
- অভ্যন্তরীণ গ্যাস সঞ্চালন: - হাইড্রোফাইটের টিস্যুগুলো অভ্যন্তরীণভাবে বায়ু পরিবহন করতে সক্ষম। এটি তাদের পানির নিচে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ ও সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।
6. ফ্লোটেশন (ভেসে থাকা):
- ভেসে থাকার জন্য বিশেষ গঠন:- অনেক হাইড্রোফাইট যেমন জল শাপলা ও হায়াসিন্থের কান্ড ও পাতায় বায়ুভর্তি কোষ থাকে, যা তাদের পানির ওপরে ভাসতে সাহায্য করে।
7. পানি শোষণ ও বহিষ্কার:
- অধিক পানির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ:- যেহেতু তারা সবসময় পানির সংস্পর্শে থাকে, হাইড্রোফাইটকে অধিক পানি শোষণ করে তা দ্রুত বের করার ক্ষমতা থাকতে হয়। তাদের টিস্যুগুলো পানির স্রোত থেকে সুরক্ষা পেতে সক্ষম।
কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1) এল নিনোর প্রভাবে কোথায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় ?
Ans: এল নিনোর প্রভাবে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূলে ও আটকামা মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত হয় ।
2) ভারতের একটি ধসপ্রবণ রাজ্যের নাম লেখো ।
Ans: ভারতের সর্বাধিক ধসপ্রবণ রাজ্য – হিমাচল প্রদেশ , উত্তরাখণ্ড । অধিক ধসপ্রবণ রাজ্য — অরুণাচল প্রদেশ , মিজোরাম ।
3) মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে বছরে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন কেমন হয় ?
Ans: গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও শীতকালে উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় ।
4) বায়ুমণ্ডলে CO,বৃদ্ধির প্রধান উৎস কী ?
Ans: বায়ুমণ্ডলে CO,বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ।
5) DART- এর পুরো কথাটি কী ?
Ans: DART -এর পুরো কথাটি হলো- Deep Ocean Assessment and Reporting of Tsunami .
6) কোপেনের জলবায়ু শ্রেণি বিভাগে BS জলবায়ু বলতে কী বোঝো ?
Ans: কোপেনের জলবায়ু শ্রেণিবিভাগে BS জলবায়ু বলতে মরুপ্রায় বা স্তেপ জলবায়ুকে বোঝানো হয় ৷
7) সুনামি কী ?
Ans: বিশালাকার সামুদ্রিক ঢেউকে জাপানি ভাষায় সুনামি বলে । সমুদ্রগর্ভে ভূমিকম্পের মাত্রা ৪ অতিক্রম করলে সুনামির সৃষ্টি হয় ।
8) ভাস্কুলার কলা কাকে বলে ?
Ans: জাইলেম ও ফ্লোয়েম কলা দিয়ে গঠিত বিশেষ ধরনের উদ্ভিদকলা যা উদ্ভিদদেহে জল ও খাদ্যের পরিবহণ করে , তাকে ভাস্কুলার কলা বলে ।
9) অধমূল কী ?
Ans: অনেক সময় লবণাম্বু উদ্ভিদের কাণ্ডের নীচের দিকে চারদিক থেকে তক্তার মতো চ্যাপটা অংশ বের হয় এবং মাটিতে ঢুকে যায় , একে বলা হয় অধিমূল ৷
14) গ্রিনহাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী ? এর কারণ ও প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো
গ্রিনহাউস এফেক্ট (Greenhouse Effect):
গ্রিনহাউস এফেক্ট হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সৌর বিকিরণকে ধরে রেখে পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্য থেকে আসা শক্তির একটি অংশ পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছায় এবং তা শোষিত হয়, বাকিটা ফিরে যায় মহাশূন্যে। কিন্তু কিছু গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄), নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), এবং জলীয় বাষ্প (H₂O), এই বিকিরণের কিছু অংশ ধরে রাখে এবং তা আবার পৃথিবীর পৃষ্ঠে ফেরত পাঠায়। ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা জীবজগৎকে সহায়ক তাপমাত্রায় রাখে। এটি একটি স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া, কারণ এটি ছাড়া পৃথিবী খুব ঠাণ্ডা হয়ে যেত।
তবে, গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নির্গমনের ফলে গ্রিনহাউস এফেক্ট তীব্রতর হয়, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণ হতে পারে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming):
গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি, যা গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নির্গমন থেকে উদ্ভূত। গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষত শিল্প কার্যকলাপ, যানবাহন, বন উজাড়, এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে নিঃসৃত হয়। এই গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে জমা হয় এবং গ্রিনহাউস এফেক্টকে বৃদ্ধি করে, যার ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব:
- i. মেরু অঞ্চলের বরফ গলন: আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলছে, যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- ii. মৌসুমী পরিবর্তন: অনেক জায়গায় অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যেমন দীর্ঘ সময় ধরে খরা, অতিরিক্ত বৃষ্টি, এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়।
- iii. জলবায়ু উদ্বাস্তু: গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে অনেক মানুষ বসতিভিটা হারাচ্ছে, বিশেষত সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি বসবাসকারী জনগোষ্ঠী।
সংক্ষেপে:
- i. গ্রিনহাউস এফেক্ট হলো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- ii. গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলো এই প্রক্রিয়ার অস্বাভাবিক তীব্রতা, যা মানুষের কার্যকলাপের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে, যার ফলে পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
15) বিশ্ব উষ্ণায়ন কারণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ন ফলাফল
A) বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ (Causes of Global Warming):
-
i. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার (Burning of Fossil Fuels):
কয়লা, তেল, এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির পোড়ানোর ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা বায়ুমণ্ডলে জমা হয় এবং তাপ আটকে রাখে।
-
ii. বন উজাড় (Deforestation):
গাছপালা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। বন উজাড় হলে বাতাসে CO₂ এর পরিমাণ বাড়ে এবং তা বায়ুমণ্ডলে জমা হয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
-
iii. শিল্প কারখানার নির্গমন (Industrial Emissions):
শিল্প কার্যক্রম থেকে নিঃসৃত গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন CO₂, মিথেন (CH₄), এবং নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O) গ্রিনহাউস এফেক্টকে বৃদ্ধি করে।
-
iv. যানবাহনের ধোঁয়া (Vehicle Emissions):
যানবাহন থেকে নিঃসৃত কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাস বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ায়।
-
v. কৃষি কার্যকলাপ (Agricultural Practices):
গবাদিপশু পালন এবং ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত সার থেকে মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড নির্গত হয়, যা বিশ্ব উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখে।
-
vi. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রযুক্তিগত কার্যকলাপ (Technological Developments):
শিল্প ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।
B) বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল (Effects of Global Warming):
-
i. মেরু অঞ্চলের বরফ গলন (Melting of Polar Ice Caps):
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
-
ii. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি (Rising Sea Levels):
বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অনেক নিম্নাঞ্চলীয় দেশ এবং উপকূলীয় শহরগুলির জন্য বিপজ্জনক।
-
iii চরম আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি (Increase in Extreme Weather Events):
তীব্র তাপপ্রবাহ, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, এবং খরার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এতে কৃষি, অর্থনীতি, এবং মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ছে।
-
iv. খাদ্য ও পানির ঘাটতি (Food and Water Shortages):
উষ্ণায়নের ফলে ফসল উৎপাদন কমে যেতে পারে এবং পানির উৎস শুকিয়ে যেতে পারে। এর ফলে খাদ্য ও পানির ঘাটতি বাড়তে পারে।
-
v. জীববৈচিত্র্যের হ্রাস (Loss of Biodiversity):
তাপমাত্রার বৃদ্ধি এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল হারাচ্ছে এবং বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে।
-
vi. স্বাস্থ্য সমস্যার বৃদ্ধি (Increase in Health Issues):
উচ্চ তাপমাত্রা এবং বায়ুর দূষণজনিত রোগ যেমন হাঁপানি, হৃদরোগ এবং তাপপ্রবাহের কারণে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
-
vii. জলবায়ু উদ্বাস্তু বৃদ্ধি (Increase in Climate Refugees):
যেসব অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ছে, সেখান থেকে মানুষ স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বাড়ছে।
-
viii. অর্থনৈতিক প্রভাব (Economic Impact):
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে কৃষি, পর্যটন, এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চরম আবহাওয়ার কারণে অবকাঠামোগত ক্ষতি এবং পুনর্গঠনের জন্য প্রচুর খরচ হচ্ছে।
সংক্ষেপে:
- কারণ: জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বন উজাড়, শিল্প কারখানার নির্গমন, যানবাহনের ধোঁয়া, এবং কৃষি কার্যকলাপ বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ।
- ফলাফল: বরফ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া, খাদ্য ও পানির ঘাটতি, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্ব উষ্ণায়নের বড় ফলাফল।
Read more / আরও পড়ুন
HS 2025 Geography Landform Process Suggestion Question Answer - উচ্চমাধ্যমিক 2025 ভূগোল ভূমিরূপ প্রক্রিয়া সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর
HS 2025 Geography Soil Suggestion Question Answer - উচ্চমাধ্যমিক 2025 ভূগোল মৃত্তিকা সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর
এই আর্টিকেলটি তথ্য এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এতে দেওয়া তথ্যের সঠিকতা, পূর্ণতা, বা বর্তমানতার জন্য লেখক বা প্রকাশকের কোনও নিশ্চয়তা নেই। যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে, পাঠককে নিজস্ব গবেষণা ও বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই আর্টিকেলে ব্যবহৃত তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত এবং পাঠকদের সুবিধার জন্য প্রদত্ত। তবে, প্রতিটি ব্যক্তির বা পরিস্থিতির জন্য তথ্যের প্রাসঙ্গিকতা ভিন্ন হতে পারে। সুতরাং, লেখক বা প্রকাশক কোনওরূপ ক্ষতি বা ক্ষতির জন্য দায়ী হবে না যা এই আর্টিকেল পড়ার কারণে হতে পারে।
বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এর সময়মতো হালনাগাদ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য পাঠককে অতিরিক্ত উৎস বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই আর্টিকেলটি কোনো বিশেষজ্ঞ পরামর্শ বা পরামর্শের বিকল্প নয় এবং এটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।