উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ভূগোল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12th Geography Economic Activity Suggestion Question and Answer
উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর ভূগোল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12th Geography Economic Activity Suggestion Question and Answer নিচে দেওয়া হলো।
এই দ্বাদশ শ্রেণীর ভূগোল সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর – WBCHSE Class 12 Geography Question and Answer, Suggestion, Notes
– অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ (পঞ্চম অধ্যায়) থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী সাজেশন প্রশ্ন উত্তর MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer
গুলি আগামী West Bengal Class 12th Twelve XII Geography Examination – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।
অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ | Economic Activity
উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ভূগোল বিষয়ের মধ্যে "অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ" (Economic Activities) একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলতে বোঝায় এমন সমস্ত কাজ, যা মানুষের অর্থনৈতিক লাভ অর্জন করতে সহায়তা করে। অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত:
১. প্রাথমিক ক্রিয়াকলাপ (Primary Activities)
এটি এমন সব কর্মকাণ্ডকে বোঝায়, যা প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে মানুষ সরাসরি প্রকৃতি থেকে সম্পদ আহরণ করে। প্রধান প্রাথমিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে পড়ে:
- i. কৃষি
- ii. মৎস্যচাষ
- iii. বনায়ন
- iv. খনিজ আহরণ
২. দ্বিতীয়িক ক্রিয়াকলাপ (Secondary Activities)
এগুলি এমন কর্মকাণ্ড, যা প্রাথমিক পণ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে নতুন পণ্য তৈরি করে। এখানে কাঁচামালকে রূপান্তরিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ:
- i. শিল্প কারখানা (গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স)
- ii. নির্মাণ শিল্প (বিল্ডিং, ব্রিজ)
৩. তৃতীয়িক ক্রিয়াকলাপ (Tertiary Activities)
এখানে পরিষেবা প্রদান করা হয়। এই সেক্টরের মধ্যে পড়ে:
- i. পরিবহন ও যোগাযোগ
- ii. শিক্ষা
- iii. স্বাস্থ্যসেবা
- iv. ব্যাংকিং ও বীমা
৪. চতুর্থিক ক্রিয়াকলাপ (Quaternary Activities)
এই সেক্টর জ্ঞানভিত্তিক পরিষেবা প্রদান করে। এর মধ্যে গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশাসনিক কাজ অন্তর্ভুক্ত হয়।
৫. পঞ্চমিক ক্রিয়াকলাপ (Quinary Activities)
এগুলি মূলত উচ্চস্তরের সিদ্ধান্তগ্রহণ ও নীতি নির্ধারণ সম্পর্কিত কাজের সঙ্গে যুক্ত, যেমন:
- i. সরকারি কাজ
- ii. ব্যবসায়িক নেতৃত্ব
এগুলো উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ভূগোলে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মূল ভাগ এবং এগুলোর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলো কীভাবে পরিচালিত হয়, তা বোঝানো হয়।েন্ট।
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | HS Geography Economic Activity Chapter MCQ Question and Answer
1) আখ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে ( 2011 সাল অনুযায়ী ) –
A) ভারত
B) পাকিস্তান
C) ব্রাজিল
D) বাংলাদেশ
Ans: C) ব্রাজিল
2) শস্যাবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো—
A) অধিক ফসল ফলানো
B) মাটির উর্বরতা
C) মাটির আর্দ্রতা বৃদ্ধি
D) কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি
Ans: C) মাটির আর্দ্রতা বৃদ্ধি
3) কৃষিকাজ হলো একধরনের—
A) প্রকৃতিনির্ভর
B) সেবামূলক
C) প্রযুক্তিনির্ভর
D) সামাজিক কাজ
Ans: A) প্রকৃতিনির্ভর
4) স্থানান্তর কৃষি ভারত ও বাংলাদেশে কী নামে পরিচিত ?
A) তামরাই
B) লাদাং
C) জুম
D) রোকা
Ans: C) জুম
5) একটি মূল শস্য চাষের মাঝে আর একটি অপ্রধান শস্য চাষকে বলে—
A) আর্দ্র কৃষি
B) শুষ্ক কৃষি
C) স্থানান্তর কৃষি
D) interculture কৃষি
Ans: D) interculture কৃষি
6) ধানের ক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয় –
A) মানালিতে
B) ম্যানিলাতে
C) ভিয়েনাতে
D) বাংলাদেশে
Ans: A) মানালিতে
7) দক্ষিণ ও দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার জনবহুল দেশগুলিতে কোন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ হয় ?
A) ব্যাপক
B) নিবিড়
C) বাজারভিত্তিক
D) বাগিচা
Ans: B) নিবিড়
8) ওলেরিকালচার – এ কোন শাকসবজির চাষ হয় ?
A) গোলাপ
B) পেয়ারা
C) কলা
D) কুমড়ো
Ans: D) কুমড়ো
9) পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য কৃষিজ ফসল
A) চা
B) পাট
C) রবার
D) তুলা
Ans: D) তুলা
10) যিনি প্রথম ‘ শস্য সমন্বয় ‘ ধারণাটির অবতারণা করেন , তিনি হলেন–
A) ই . ডব্লিউ জিমারম্যান
B) ভন থুনেন
C) আলফ্রেড ওয়েবার
D) জে.সি. উইভার
Ans: D) জে.সি. উইভার
11) দ্রব্যসূচক 1 অপেক্ষা যত কম হবে শিল্পের অবস্থান ততই—
A) কাঁচামাল উৎসের নিকট হবে
B) বাজার কেন্দ্র
C) কাঁচামাল ও বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে হবে
D) এর মধ্যে কোনোটিই নয়
Ans: B) বাজার কেন্দ্র
|
12) টোকিও – ইয়োকোহামা শিল্পাঞ্চলের প্রধান শিল্প হলো—
A) পাট শিল্প
B) লৌহ – ইস্পাত শিল্প
C) কার্পাস শিল্প
D) মাংস শিল্প
Ans: B) লৌহ – ইস্পাত শিল্প
13) নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে কার্পাসবয়ন শিল্পের অবনতির কারণ—
A) নগরায়ণ
B) শ্রমিক – মালিক বিরোধ
C) বন্দরের অভাব
D) প্রতিকূল জলবায়ু
Ans: A) নগরায়ণ
14) ভারতের প্রথম নিউজপ্রিন্ট কারখানা গড়ে ওঠে—
A) মধ্যপ্রদেশের নেপানগরে
B) কর্নাটকের ভদ্রাবতী
C) কেরালার নিউজপ্রিন্ট নগরে
D) শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায়
Ans: A) মধ্যপ্রদেশের নেপানগরে
15) আইসোটিম হলো—
A) সমপরিবহণ ব্যয়রেখা
B) যৌথ পরিবহণ ব্যয়রেখা
C) সমমুনাফা
D) কোনোটিই নয়
Ans: A) সমপরিবহণ ব্যয়রেখা
16) পৃথিবীর মোটরগাড়ির রাজধানী বলা হয় ____ কে
A) আলবামা
B) কানসাস
C) ডেট্রয়েট
D) বাউলিন গ্রিন
Ans: C) ডেট্রয়েট
17) ভারতের বৃহত্তম রেলইঞ্জিন কারখানাটি অবস্থিত ___ এ
A) আমেদাবাদ
B) চিত্তরঞ্জন
C) জামশেদপুর
D) সালেম
Ans: B) চিত্তরঞ্জন
18) কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্প গড়ে তোলার উপযুক্ত স্থান হলো
A) কার্পাস উৎপাদক অঞ্চলের কাছে
B) বাজারের কাছে
C) নদীর ধারে
D) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কাছে
Ans: A) কার্পাস উৎপাদক অঞ্চলের কাছে
19) শিল্প গড়ে তোলার পক্ষে আদর্শ স্থান হলো—
A) যেখানে আইসোডোপেনের মান সবচেয়ে বেশি
B) আইসোডোপেনের মান সবচেয়ে কম
C) আইসোটিমের মান সবচেয়ে কম
D) আইসোটিমের মান সবচেয়ে বেশি
Ans: B) আইসোডোপেনের মান সবচেয়ে কম
20) প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের উৎপাদন , ব্যবহার ও রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম কোন দেশ ?
A) জাপান
B) জার্মানি
C) অস্ট্রেলিয়া
D) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
Ans: D) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
21) রাউরকেল্লা স্টিল প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে ___ বামতীরে
A) অজয় নদীর
B) দামোদর নদীর
C) কংসাবতী নদীর
D) ব্রাহ্মণী নদীর
Ans: D) ব্রাহ্মণী নদীর
22) কার্পাসবয়ন শিল্পের যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা TEXMACO ) অবস্থিত—
A) বর্ধমান জেলার রূপনারায়ণপুরে
B) কলকাতার কাছে বেলঘরিয়ায়
C) তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে
D) রাঁচির কাছে হাতিয়াতে
Ans: B) কলকাতার কাছে বেলঘরিয়ায়
|
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | HS Geography Economic Activity Small Question and Answer
1) মিলেট কী ?
Ans: জোয়ার , বাজরা , রাগি প্রভৃতি ক্ষুদ্র দানাশস্যকে একসাথে মিলেট বলে ।
2) বাংলাদেশের একটি পার্ট উৎপাদক অঞ্চলের নাম লেখো ।
Ans: বাংলাদেশের ফরিদপুর , যশোর , কুষ্টিয়া , পাবনা , রংপুরে পাট পাওয়া যায় ।
3) দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার একটি বাগিচা ফসলের নাম লেখো ।
Ans: দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার একটি বাগিচা ফসল হলো রাবার ।
4) গম চাষের অনুকূল জলবায়ু কোনটি ?
Ans: গম চাষের জন্য নাতিশীতোয় জলবায়ু আদর্শ ।
5) আখ চাষের জন্য কীরকম উন্নতা প্রয়োজন ?
Ans: আখ চাষের জন্য 20 ° C থেকে 26 ° C উন্নতার প্রয়োজন ।
6) মালয়েশিয়াতে স্থানান্তর কৃষির স্থানীয় নাম কী ?
Ans: মালয়েশিয়াতে স্থানান্তর কৃষির নাম হলো Ladang ( লাদাং ) ।
7) কফি কোন জলবায়ু অঞ্চলের ফসল ।
Ans: কফি উয় – ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল ।
8) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধান উৎপাদক দেশ কোনটি ?
Ans: চিন ।
9) পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি কাকে বলে ?
Ans: আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেইরি অঞ্চল ।
10) পোমাম কালচার কী ?
Ans: সারাবছর পাওয়া যায় এমন ফল ও মরসুমি ফলের চাষকে পোমাম কালচার বলে ।
11) পাকিস্তানিরা কোন ফসলকে সাদা সোনা বলে ?
Ans: কার্পাসকে পাকিস্তানিরা "সাদা সোনা" বলে ।
12) "সোনালি তত্ত্ব " কোন ফসলকে বলা হয় ?
Ans: পাটকে "সোনালি ততু " বলা হয় ।
13) ব্রাজিলের বৃহত্তম আখ উৎপাদক রাজ্য কোনটি ?
Ans: সাওপাওলো ব্রাজিলের বৃহত্তম আখ উৎপাদন রাজ্য ।
14) রবিশস্য কাকে বলে ?
Ans: যেসব ফসলের চাষ শীতের প্রারম্ভে করা হয় ও বর্ষার শুরুতে ফসল তোলা হয় তাদের রবিশস্য বলে । যেমন — গম , তৈলবীজ ।
15) শস্যাবর্তন কী ?
Ans: যে প্রক্রিয়ায় একই জমিতে এক ফসল চাষ না করে ভিন্ন ভিন্ন ফসল পর্যায়ক্রমে চাষ করা হয় সেই প্রক্রিয়াকে শস্যাবর্তন বলে ।
16) ICAR অনুযায়ী ভারতের তুলা অঞ্চল কোনটি ?
Ans: ICAR অনুযায়ী ভারতের তুলা অঞ্চল হলো মহারাষ্ট্র , গুজরাট , কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চল ।
17) শীতকালীন গম পৃথিবীর কোথায় চাষ হয় ?
Ans: শীতকালীন গম পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে চাষ হয়ে থাকে সেগুলি হলো চিন , জাপান , অস্ট্রেলিয়া ও ভারত ইত্যাদি ।
18) CBD কাকে বলে ?
Ans: নগর বা শহরের কেন্দ্রে তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত অঞ্চলকে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এলাকা বা Central Business District বা CBD বলে ।
19) সবুজ বিপ্লব কী ?
Ans: 1960 – এর দশকে ভারতের খাদ্য সমস্যা সমাধানকল্পে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক উপকরণ প্রয়োগের মাধ্যমে উত্তর – পশ্চিম ভারতে কৃষিজাত শস্য উৎপাদনে প্রধানত গম চাষে যে অভাবনীয় অগ্রগতি দেখা যায় তাকেই সবুজ বিপ্লব বলে ।
20) ফ্লোরিকালচার কী ?
Ans: সারাবছর ধরে ফোটে এমন ফুল , মরসুমি বা ঋতুভিত্তিক ফুল এবং বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহারি গাছের চাষকে ফ্লোরিকালচার বলা হয় ।
21) পৃথিবীর ফুসফুস কাকে বলে ?
Ans: আমাজন অববাহিকায় অবস্থিত নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য অত্যধিক পরিমাণ CO , শোষণ ও O , উৎপাদনের করে বলে একে ‘ পৃথিবীর ফুসফুস ‘ নামে আখ্যায়িত করা হয় ।
22) দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব কী ?
Ans: 2004 সালে ভারত সরকার বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান সুনিশ্চিত ও পরিবেশের অবনমন রোধ এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সকল প্রকার ফল উৎপাদনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে , একে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব বলে ।
23) Foot – Loose শিল্প কাকে বলে ?
Ans: যেসকল শিল্পের বস্তুসূচক বা পণ্যসূচক 1 হয় , তাদের Foot – Loose শিল্প বলে ।
|
24) পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ?
Ans: প্রধান কাঁচামাল হলো ন্যাপথা যা খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য ।
25) দোহ শিল্পে কোন রাজ্য পথিকৃৎ ?
Ans: দোহ শিল্পে গুজরাট রাজ্য পথিকৃৎ ।
26) কাগজ শিল্পের কাঁচামাল কী কী ?
Ans: কাগজ শিল্পের কাঁচামালগুলি হলো পাট তুলো ইত্যাদি ।
27) পেট্রোরসায়ন শিল্পের কাঁচামালগুলি কী ?
Ans: কৃত্রিম ততু , পলিমার , ইলাসটোমার ইত্যাদি ।
28) ধাতুমল কী ?
Ans: মারুৎ চুল্লির তলদেশের নির্গম পথ দিয়ে বের হওয়া অপদ্রব্যকে ধাতুমল বলে ।
29) ভারতের বৃহত্তম মোটরগাড়ি নির্মাণ কোম্পানির নাম কী ?
Ans: ভারতের বৃহত্তম মোটরগাড়ি নির্মাণ কোম্পানি হলো মারুতি উদ্যোগ লিমিটেড ।
30) কোন ঘটনাকে পৃথিবীর বৃহত্তম শিল্প বিপর্যয় বলা হয় ?
Ans: ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনাকে পৃথিবীর বৃহত্তম শিল্প বিপর্যয় বলা হয় ।
31) ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগারের নাম কী ?
Ans: গুজরাটের জামনগর ।
32) ময়দা শিল্পের বিকাশের জন্য কী ধরনের আবহাওয়া প্রয়োজন ?
Ans: শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন ।
33) জার্মানির ম্যাস্টোর বলা হয় কোন শহরকে ?
Ans: ম্যাডবাক শহরকে ।
34) জামশেদপুরের নিকটে মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে কেন ?
Ans: মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ইস্পাত পাওয়ার সুবিধা রয়েছে ।
35) ভারতের ইস্পাত নগরী কাকে বলে ?
Ans: বন্দরনির্ভর অধাতব শিল্প হলো পেট্রোরসায়ন শিল্প ।
36) লোশ – এর শিল্প স্থাপনের মূলতত্ত্বটি কী ?
Ans: লোশ এর মূলতত্ত্ব হলো বাজার কেন্দ্রে যেখানে মুনাফা সর্বাধিক শিল্পটি সেখানে গড়ে উঠবে ।
37) ভারতের বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ কারখানা কোথায় অবস্থিত ?
Ans: অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে ।
38) বন্দরনির্ভর অধাতব শিল্প কোনটি ?
Ans: নটিক্যাল মাইল চওড়া নির্দিষ্ট উপকূল বলয়কে EEZ বা Exclusive Economic Zone বলা হয় ।
39) রেডিমেড পোশাক উৎপাদনকারী ভারতের রাজ্যগুলির নাম লেখো ।
Ans: রাজ্য — অন্ধ্রপ্রদেশ , কেরালা , উত্তরপ্রদেশ , তামিলনাড়ু , মহারাষ্ট্র , ওড়িশা , পশ্চিমবঙ্গ ।
40) স্প আয়রন কাকে বলে ?
Ans: উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মারুৎ চুল্লিতে আকরিক লোহা গলিয়ে সরাসরি টুকরো টুকরো খণ্ড প্রস্তুত হয় । একে স্পঞ্জ আয়রন বলে ।
41) NIFT- এর Full name কী ?
Ans: NIFT – National Institute of Fashion Technology যার তৈরি পোশাক অত্যন্ত জনপ্রিয় ।
42) এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কেন্দ্রের নাম কী ?
Ans: জাপানের Nippon Steel কেন্দ্রটি এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কেন্দ্র ।
43) বস্তুসূচক বা পণ্যসূচক বা দ্রব্যসূচক কাকে বলে ?
Ans: মোট কাঁচামালের ওজন ও মোট উৎপাদিত দ্রব্যের ওজনের অনুপাতকে দ্রব্যসূচক বা বস্তুসূচক বা পণ্যসূচক বলে ।
44) ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কাকে বলে ?
Ans: লৌহ – ইস্পাতজাত দ্রব্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি , কলকবজা , যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় , একে বলা হয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ।
45) অনুসারী শিল্প কী ?
Ans: যেসব ক্ষুদ্রায়তন শিল্প বৃহদায়তন শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে , তাদের অনুসারী শিল্প বলে ।
46) আইসোটিম কাকে বলে ?
Ans: ওয়েবারের মতে , কাঁচামালের পরিবহণ ব্যয় ও উৎপাদিত দ্রব্যের পরিবহণ ব্যয়কে পৃথকভাবে যে রেখা দ্বারা প্রকাশ করা হয় , তাকে আইসোটিম বলে ।
|
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | HS Geography Economic Activity Essay Question and Answer
1) পশ্চিমবঙ্গে ভারতের অধিকাংশ পাট উৎপন্ন হওয়ার কারণ কী ?
পশ্চিমবঙ্গে ভারতের অধিকাংশ পাট উৎপন্ন হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা ভূগোল এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। প্রধান কারণগুলো হলো:
- ১. উপযুক্ত জলবায়ু: পাট চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালে উচ্চ তাপমাত্রা (২৪°C থেকে ৩৫°C) এবং বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত (১৫০ থেকে ২০০ সেমি) হয়, যা পাট চাষের জন্য আদর্শ।
- ২. উর্বর পলি মাটি: গঙ্গা ও তার উপনদীগুলির বন্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গের সমতলভূমিতে পলি মাটি জমা হয়, যা পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বিশেষত গঙ্গার ব-দ্বীপ অঞ্চলের পলি মাটিতে পাট ভালোভাবে জন্মায়।
- ৩. পর্যাপ্ত জল সরবরাহ: পাটের ভালো ফলনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সরবরাহ প্রয়োজন, বিশেষ করে বীজ রোপণের সময় এবং বৃদ্ধি পর্বে। পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা, দামোদর, হুগলি, এবং অন্যান্য ছোট নদীর নেটওয়ার্ক থাকায় সেচের সুবিধা পাওয়া যায়।
- ৪. শ্রমশক্তির সহজলভ্যতা: পাট চাষ শ্রমনির্ভর, এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে সস্তায় শ্রমশক্তি পাওয়া যায়, যা পাট উৎপাদনের খরচ কমাতে সহায়ক।
- ৫. প্রবহমান নদীর সুবিধা: পাট সংগ্রহ করার পর সেটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য জলের প্রয়োজন হয়, যাকে বলা হয় রেটিং প্রক্রিয়া। পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর ছোট নদী ও জলাশয় থাকায় এই কাজটি সহজে সম্পন্ন হয়।
- ৬. পাট শিল্পের ঐতিহ্য: পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পাট চাষ এবং পাটজাত পণ্যের উৎপাদনের ঐতিহ্য রয়েছে। কলকাতা এবং আশেপাশে বেশ কিছু পাটকল (Jute Mills) থাকায় পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহ রয়েছে।
এই সমস্ত কারণগুলির মিলিত প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের প্রধান পাট উৎপাদনকারী রাজ্য হিসাবে পরিচিত।
2) পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন আছে ?
"শুষ্ক কৃষি"(Dry Farming) এমন একটি কৃষি ব্যবস্থা, যা শুষ্ক ও অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে চালানো হয়, যেখানে সেচের কোনো বা খুব কম সুবিধা থাকে। শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করেই ফসল উৎপাদন করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন শুষ্ক ও আধাশুষ্ক অঞ্চলে এই ধরনের কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন আছে। প্রধান অঞ্চলগুলো হলো:
১. মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (Middle East and North Africa)
- * সাহারা মরুভূমির আশপাশের অঞ্চল এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলি (মরক্কো, তিউনিশিয়া, মিশর)।
- * মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যেমন- সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, ইসরায়েল, এবং জর্ডান।
- * এই অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হয় এবং প্রাকৃতিক পানির উৎস সীমিত হওয়ার কারণে শুষ্ক কৃষির প্রচলন আছে। প্রধান ফসলগুলির মধ্যে আছে বার্লি, গম, খেজুর, এবং জলপাই।
২. মধ্য এশিয়া (Central Asia)
- * কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান।
- * এশিয়ার শুষ্ক তৃণভূমি এবং আধাশুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে, যেখানে গম, বার্লি, এবং অন্যান্য শস্যের চাষ হয়।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট প্লেইনস (Great Plains, USA)
- * আমেরিকার মধ্যপশ্চিমের এই এলাকায় শুষ্ক কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে টেক্সাস, কানসাস, ওকলাহোমা, এবং নেব্রাস্কা রাজ্যে।
- * এখানে গম, ভুট্টা, সয়াবিন, এবং অন্যান্য শুষ্ক জলবায়ু উপযোগী ফসল উৎপাদন করা হয়।
৪. অস্ট্রেলিয়া
- * দক্ষিণপশ্চিম অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ।
- * এখানে শুষ্ক ও আধাশুষ্ক জলবায়ুর কারণে কৃষকরা শুষ্ক কৃষি ব্যবহার করে, প্রধানত গম, বার্লি, এবং ভেড়ার চারণভূমি তৈরি করার জন্য।
৫. ভারত
- * ভারতের বিভিন্ন শুষ্ক ও আধাশুষ্ক অঞ্চল যেমন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, এবং তেলেঙ্গানায় শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে।
- * এখানে কম বৃষ্টিপাতের জন্য প্রধানত বাজরা, জোয়ার, এবং ডাল জাতীয় শস্য চাষ করা হয়।
৬. স্পেন এবং পর্তুগাল
- * আইবেরিয়ান উপদ্বীপের কিছু অংশ শুষ্ক এবং আধাশুষ্ক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এখানে গম, আঙ্গুর, জলপাই ইত্যাদি ফসল চাষ করা হয়, যেগুলো শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো জন্মায়।
৭. চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল (Northwest China)
- * চীনের শিনজিয়াং প্রদেশ এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলো শুষ্ক ও আধাশুষ্ক অঞ্চল। এখানে গম, ভুট্টা, এবং তুলা চাষ হয়।
এই সমস্ত অঞ্চলগুলিতে শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে এবং এখানকার কৃষকরা বিশেষত বৃষ্টির উপর নির্ভর করে টিকে থাকতে হয়।
3) কিউবা ইক্ষু চাষে উন্নত কেন ?
কিউবা ইক্ষু চাষে উন্নত হওয়ার পিছনে বেশ কিছু ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। এই কারণগুলির সমন্বয়ে কিউবা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইক্ষু উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। প্রধান কারণগুলো হলো:
- ১. উপযুক্ত জলবায়ু: ইক্ষু চাষের জন্য উষ্ণ, আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন, যা কিউবার আবহাওয়ার সঙ্গে ভালোভাবে মানানসই। কিউবাতে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ এবং শীতকাল তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত এবং মৃদু, যা ইক্ষু চাষের জন্য আদর্শ। এখানে গড় তাপমাত্রা প্রায় ২৫°C থেকে ৩০°C, এবং মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের ( 150-200 সেমি ) যা ইক্ষুর বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত।
- ২. উর্বর মাটি: কিউবার মাটি অত্যন্ত উর্বর, বিশেষত হাভানা প্রদেশের মাটি ইক্ষু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। মাটিতে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা ইক্ষুর ভালো বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলনের সহায়ক।
- ৩. ইতিহাস ও ঐতিহ্য: কিউবায় ইক্ষু চাষের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকেই কিউবায় ইক্ষু চাষ শুরু হয় এবং এটি দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান অংশ হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক যুগে দাস শ্রম ব্যবহারের মাধ্যমে ইক্ষু শিল্পের দ্রুত উন্নতি ঘটে।
- ৪. শ্রমশক্তি: কিউবায় ইক্ষু চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণে সস্তা শ্রমশক্তি পাওয়া যায়। ঐতিহ্যগতভাবে ইক্ষু চাষ একটি শ্রমনির্ভর প্রক্রিয়া, এবং কিউবার গ্রামীণ এলাকা থেকে যথেষ্ট শ্রমশক্তি প্রাপ্তি সম্ভব হয়।
- ৫. সরকারি সমর্থন: কিউবার সরকার ইক্ষু শিল্পকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করে আসছে। সরকারের নীতি এবং পৃষ্ঠপোষকতা ইক্ষু চাষ এবং চিনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
- ৬. ইক্ষু প্রক্রিয়াকরণ এবং চিনি শিল্পের উন্নয়ন: কিউবায় ইক্ষু থেকে চিনি উৎপাদনের জন্য অনেক চিনি কল রয়েছে। দেশটির উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা ইক্ষু চাষে আরও উন্নতি করেছে। কিউবা বিশ্বের অন্যতম প্রধান চিনি রপ্তানিকারক দেশ।
- ৭. বাজার এবং রপ্তানি: ইক্ষু এবং চিনি কিউবার রপ্তানির প্রধান উৎসগুলির একটি। বিশেষত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে কিউবার বিশেষ সম্পর্কের কারণে কিউবা অনেক দিন ধরে ইক্ষু এবং চিনি রপ্তানি করে এসেছে। চিনি রপ্তানি কিউবার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- ৮. প্রাকৃতিক সম্পদের সহজলভ্যতা: কিউবায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সম্পদ রয়েছে, যা ইক্ষু চাষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, সেচ ব্যবস্থার সুবিধা এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতও ইক্ষু চাষে সহায়ক।
এই সমস্ত কারণের মিলিত প্রভাবে কিউবা ইক্ষু চাষে এবং ইক্ষু থেকে চিনি উৎপাদনে উন্নত হতে পেরেছে।
3) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল ফল উৎপাদনে বিখ্যাত কেন ?
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল ফল উৎপাদনে বিখ্যাত হওয়ার মূল কারণ হলো এই অঞ্চলের অনন্য জলবায়ু, যা ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর কিছু বৈশিষ্ট্য এবং কারণ যা এই অঞ্চলকে ফল উৎপাদনে বিখ্যাত করেছে তা হলো:
- ১. উপযোগী ঋতুচক্র: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকাল মৃদু ও স্যাঁতসেঁতে। এই ঋতুচক্রটি এমন ফলের জন্য উপযুক্ত, যেগুলো গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো জন্মায় এবং শীতকালে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা পায়। এই জলবায়ু বিশেষত আঙ্গুর, জলপাই, লেবু, কমলা, ডুমুর, এবং আখরোটের মতো ফলের জন্য উপযুক্ত।
- ২. গরম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং বৃষ্টিপাত কম হয়। এই গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়া ফলগুলোর শর্করা গঠনের জন্য সহায়ক, যা তাদের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণকে বৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, আঙ্গুরের উচ্চ শর্করা কনটেন্ট এই অঞ্চলের ওয়াইন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- ৩. মৃদু শীতকাল: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে শীতকালের তাপমাত্রা বেশ মৃদু থাকে, যা অনেক ফল গাছের জন্য উপযুক্ত। বেশি ঠান্ডা পড়ে না বলে গাছের ক্ষতি কম হয়, এবং গাছগুলো ক্রমাগত উৎপাদনে সক্ষম হয়। বিশেষত, কমলা ও লেবু জাতীয় সাইট্রাস ফল মৃদু শীতকালের কারণে ভালোভাবে জন্মায়।
- ৪. আর্দ্র শীতকাল: শীতকালে বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলে প্রচুর আর্দ্রতা যোগায়, যা ফলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করে। প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত এই বৃষ্টিপাত কৃষকদের জন্য সেচের খরচ কমিয়ে আনে এবং ফল উৎপাদনকে সাশ্রয়ী করে তোলে।
- ৫. উর্বর মাটি: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং খনিজসমৃদ্ধ, যা ফলের ভালো বৃদ্ধির সহায়ক। পাহাড়ি অঞ্চলের ঢালু ভূমি এবং নদীর কাছাকাছি অঞ্চলে এই উর্বর মাটি পাওয়া যায়।
- ৬. দীর্ঘায়িত ফল উৎপাদন মৌসুম: এই অঞ্চলের ফল উৎপাদন মৌসুম তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ। উষ্ণ জলবায়ুর কারণে গাছপালা দীর্ঘ সময় ধরে ফল দেয়, ফলে সারা বছর ধরে ফল উৎপাদন অব্যাহত থাকে।
- ৭. পার্থিব অবস্থান ও বাণিজ্যিক সুবিধা: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল প্রাচীনকাল থেকে বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের ফল চাষের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের ফলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ হয়েছে।
- ৮. নির্দিষ্ট ফলের চাষে ঐতিহ্য ও জ্ঞান: আঙ্গুর, জলপাই, ডুমুর, এবং সাইট্রাস ফলের চাষের দীর্ঘ ঐতিহ্য এই অঞ্চলে রয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে কৃষকরা তাদের ফল চাষের কৌশলকে উন্নত করেছে, যা এই অঞ্চলের ফল উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
প্রধান ভূমধ্যসাগরীয় ফল:
- i) আঙ্গুর (ওয়াইন ও টেবিল আঙ্গুর)
- ii) জলপাই (তেল ও খাওয়ার জন্য)
- iii) কমলা, লেবু, এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফল
- iv) ডুমুর, বাদাম, এবং আখরোট
এই সকল কারণের জন্যই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল ফল উৎপাদনে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।
4) শস্যসমন্বয় কী ? ভারতের বিভিন্ন শস্যসমন্বয় অঞ্চল চিহ্নিত করো।
"শস্যসমন্বয় (Crop Rotation)" হল একটি কৃষি পদ্ধতি, যেখানে একই ভূমিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন প্রকার শস্যের চাষ করা হয় একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে। এটি মাটির উর্বরতা রক্ষা, রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।
শস্যসমন্বয়ের বৈশিষ্ট্য:
- 1. বিভিন্ন প্রজাতির শস্যের ক্রম অনুসারে চাষ: মাটির পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে এবং মাটির ক্ষয় কমাতে এক শস্য কাটার পর অন্য শস্য চাষ করা হয়।
- 2. মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করা: একই জমিতে বারবার একই ধরনের ফসল চাষ করলে মাটির পুষ্টি উপাদান দ্রুত শেষ হয়ে যায়। শস্যসমন্বয় এই সমস্যার সমাধান করে, কারণ বিভিন্ন শস্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ব্যবহার করে।
- 3. রোগ ও পোকামাকড়ের নিয়ন্ত্রণ: এক শস্যের রোগ বা পোকামাকড় পরবর্তী ফসলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না। এর ফলে কীটনাশক এবং রোগনাশকের ব্যবহার কমে যায়।
শস্যসমন্বয়ের উদাহরণ:
- i) গম → ডাল → সরিষা → ভুট্টা: এখানে গম মাটির থেকে নাইট্রোজেন ব্যবহার করে, পরে ডালজাতীয় শস্য (যেমন মসুর বা ছোলা) মাটিতে নাইট্রোজেন যুক্ত করে, তারপর সরিষা ও ভুট্টার চাষ করা হয়।
- ii) ভুট্টা → মটর → আলু → গম: এই ধরনের সমন্বয়ও মাটির পুষ্টি সংরক্ষণে সহায়ক।
শস্যসমন্বয়ের উপকারিতা:
- 1. মাটির উর্বরতা বজায় রাখা: শস্যসমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শস্য চাষের ফলে মাটির পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা হয়।
- 2. মাটির ক্ষয় রোধ করা: একই জমিতে বিভিন্ন শস্য চাষের ফলে মাটির ক্ষয় কম হয়।
- 3. পোকামাকড় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ: এক ধরনের ফসলের রোগ ও পোকা অন্য ফসলের ক্ষতি করতে পারে না।
- 4. জল সংরক্ষণ: শস্যসমন্বয় জল সংরক্ষণে সহায়ক হতে পারে, কারণ কিছু শস্য মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে।
ভারতে শস্যসমন্বয় অঞ্চল :
উইভার পদ্ধতিতে 2003-06 সালে জেলাভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে ভারতকে ৪ টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয় যাতে ধান , গম , ভুট্টা , ছোলা , বালি , তৈলবীজ , তুলা , আখ , বাজরা ও মিলেট রয়েছে ।
- 1) একফসলি এলাকা : পূর্ব ভারতে নিম্ন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা , পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , ওড়িশা , ছত্তিশগড় , তামিলনাড়ু , কেরালা , কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রের উপকূলে একফসলি ধান এবং রাজস্থান ও গুজরাট একফসলি বাজরা চাষ প্রচলিত ।
- 2) দ্বিফসলি এলাকা : উত্তর পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা দ্বিফসলি গম ও ধান এবং গুজরাট , মধ্যপ্রদেশ , মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক , অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু দ্বিফসলি তুলা ও জোয়ার চাষে প্রসিদ্ধ ।
- 3) ত্রিফসলি এলাকা : উত্তর পূর্ব ভারতের হিমাচল প্রদেশে ধান , ভুট্টা ও গম , উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশে গম , ধান ও আখ রাজস্থানের উত্তর পশ্চিমাংশে বাজরা , তৈলবীজ ও ভুট্টা ইত্যাদি ত্রিফসলি এলাকা লক্ষ কর যায় ।
5) সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারতীয় কৃষির সুফলগুলি উল্লেখ করো । ভারতে নীল বিপ্লবের কারণ উল্লেখ করো ।
A) সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারতীয় কৃষির সুফল:
"সবুজ বিপ্লব" ভারতের কৃষিক্ষেত্রে ১৯৬০-এর দশকে প্রবর্তিত একটি কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি, যার ফলে শস্য উৎপাদনের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। এর নেতৃত্ব দেন নর্মান বোরলগ এবং ভারতীয় বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন। সবুজ বিপ্লবের কিছু প্রধান সুফল নিম্নরূপ:
- 1. শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি: উচ্চ ফলনশীল বীজ (HYV) এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে গম এবং ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছিল।
- 2. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: খাদ্য উৎপাদনের বৃদ্ধি ভারতকে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
- 3. কৃষকের আয় বৃদ্ধি: উচ্চ ফলনশীল শস্যের কারণে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা আরও উন্নত বীজ, সার এবং যন্ত্রপাতি কেনার সক্ষমতা অর্জন করে।
- 4. কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন: উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, যেমন ট্র্যাক্টর, সেচ ব্যবস্থা, এবং কীটনাশকের ব্যবহার, কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আধুনিক ও কার্যকর করে তোলে।
- 5. কৃষি থেকে শিল্পের দিকে স্থানান্তর: সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, যা শ্রমশক্তিকে অন্যান্য শিল্পে স্থানান্তর করতে সাহায্য করে। এটি দেশের শিল্পায়নের পথকে সুগম করে।
- 6. স্বনির্ভরতা অর্জন: সবুজ বিপ্লবের কারণে ভারত খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে এবং খাদ্য আমদানির প্রয়োজন কমে যায়।
B) ভারতে নীল বিপ্লবের কারণ:
"নীল বিপ্লব" হল ভারতের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির একটি কর্মসূচি, যা ১৯৭০-এর দশকে চালু হয়েছিল। এর মাধ্যমে সামুদ্রিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় ধরনের মাছ চাষের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছিল। ভারতে নীল বিপ্লবের কারণগুলো নিম্নরূপ:
- 1. মাছের চাহিদা বৃদ্ধি: ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। নীল বিপ্লব এই চাহিদা পূরণের জন্য মাছ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হয়।
- 2. মৎস্যশিল্পে আয় বৃদ্ধি: মাছ চাষ থেকে আয় বাড়ানোর জন্য নীল বিপ্লবের মাধ্যমে আধুনিক মৎস্যচাষ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। ফলে বিশেষত উপকূলীয় ও গ্রামীণ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়।
- 3. মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন: সামুদ্রিক মৎস্য এবং অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ চাষের উন্নতির জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও সংরক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
- 4. রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা: মাছ এবং মৎস্যজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীল বিপ্লবের মাধ্যমে মাছ উৎপাদনের গুণগত মান ও পরিমাণ বাড়ানো হয়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
- 5. সরকারি সমর্থন ও নীতি প্রণয়ন: সরকার মাছ চাষকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, যার মাধ্যমে মৎস্যশিল্পের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়।
নীল বিপ্লবের ফলে ভারতে মাছের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
6) পূর্ব ভারতে লৌহ – ইস্পাত শিল্পের একদেশীভবনের কারণ লেখো । ভারতে রেডিমেড পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো ।
পূর্ব ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একদেশীভবনের (Localization) কারণগুলি ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবকাঠামোগত সুবিধা এবং শিল্প উন্নয়নের বিভিন্ন দিকের সাথে সম্পর্কিত। এই অঞ্চলে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং ছত্তিশগড়ের কিছু অংশে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের উল্লেখযোগ্য একদেশীভবন ঘটেছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
- ১. প্রচুর লৌহ আকরিকের প্রাপ্যতা: পূর্ব ভারতে, বিশেষত ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশায় প্রচুর লৌহ আকরিকের খনি রয়েছে। লৌহ আকরিকের এই প্রাচুর্য ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেওনঝার (ওড়িশা), সিংভূম (ঝাড়খণ্ড) এবং অন্যান্য অঞ্চলে লৌহ আকরিকের মজুত সহজলভ্য হওয়ায় শিল্পগুলি এই অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
- ২. কয়লা ও শক্তির প্রাচুর্য: ইস্পাত শিল্পের জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় আকরিক গলানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তি প্রয়োজন। পূর্ব ভারতে, বিশেষত ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের দামোদর উপত্যকায় প্রচুর কয়লার খনি রয়েছে, যা ইস্পাত কারখানার জ্বালানির প্রধান উৎস। রানীগঞ্জ, ঝাড়িয়া, এবং বোকারোর কয়লার মজুত শিল্প স্থাপনে সহায়ক।
- ৩. জল সরবরাহ: ইস্পাত শিল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণে জল প্রয়োজন, যা পূর্ব ভারতের নদীসমৃদ্ধ অঞ্চল যেমন দামোদর, সুবর্ণরেখা, এবং ময়ূরাক্ষী নদীর আশেপাশে সহজলভ্য। এই নদীগুলি ইস্পাত কারখানাগুলির জল সরবরাহের একটি প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।
- ৪. যাতায়াত এবং পরিবহন সুবিধা: পূর্ব ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও হাওড়া অঞ্চলে উন্নত রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে, যা লৌহ আকরিক এবং অন্যান্য কাঁচামালের পরিবহন সহজ করেছে। কলকাতা বন্দরের নিকটবর্তীতা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুবিধা দেয়, যা রপ্তানি ও আমদানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ৫. শ্রমশক্তি প্রাপ্যতা: পূর্ব ভারতে প্রচুর পরিমাণে সস্তা ও দক্ষ শ্রমশক্তি পাওয়া যায়, যা শিল্প গড়ে তোলার জন্য সহায়ক। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের গ্রামাঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক এই অঞ্চলে ইস্পাত কারখানাগুলিতে কাজ করতে আসে।
- ৬. বাজারের নিকটবর্তীতা: পূর্ব ভারতে ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে বৃহত্তর শিল্প এলাকা এবং নগরায়নের সুবিধা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, আসানসোল, এবং দুর্গাপুরের মতো শহরগুলি লৌহ-ইস্পাতের বৃহত্তর বাজার তৈরি করে, যেখানে নির্মাণ শিল্প এবং ভারী যন্ত্রপাতির চাহিদা বেশি।
- ৭. সরকারি নীতি ও বিনিয়োগ: স্বাধীনতার পর ভারত সরকার পূর্ব ভারতে শিল্পায়ন এবং ভারী শিল্প স্থাপনে বিশেষ মনোযোগ দেয়। ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে ঝাড়খণ্ডের বোকারো, রাউরকেলা (ওড়িশা), এবং দুর্গাপুর (পশ্চিমবঙ্গ) ইস্পাত কারখানাগুলি স্থাপিত হয়, যা লৌহ-ইস্পাত শিল্পের বিকাশে বড় ভূমিকা পালন করে।
- ৮. ইতিহাস ও ঐতিহ্য: পূর্ব ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। টাটাগোষ্ঠী কর্তৃক জামশেদপুরে ১৯০৭ সালে প্রথম ইস্পাত কারখানা স্থাপনের পর এই অঞ্চলে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এরপরে জামশেদপুরকে কেন্দ্র করে আরও অনেক কারখানা গড়ে ওঠে।
এই সমস্ত কারণের সমন্বয়ে পূর্ব ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একদেশীভবন ঘটেছে, এবং এটি ভারতীয় শিল্পায়নের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
ভারতে রেডিমেড পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি
ভারতে "রেডিমেড পোশাক শিল্প" (Ready-Made Garment Industry) গড়ে ওঠার পিছনে অনেক ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত কারণ রয়েছে। ভারত বর্তমানে বিশ্বজুড়ে রেডিমেড পোশাক উৎপাদন এবং রপ্তানিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত। রেডিমেড পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি নিচে আলোচনা করা হলো:
১. সস্তা ও দক্ষ শ্রমশক্তি:
- i) ভারতে সস্তা এবং প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি সহজলভ্য। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকরা এই শিল্পে কাজ করতে আগ্রহী, কারণ এটি তাদের জন্য আয়ের একটি বড় উৎস।
- ii) দক্ষ এবং আধাদক্ষ শ্রমিকদের প্রাচুর্য রেডিমেড পোশাক উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনে, যা ভারতকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে।
২. বিপুল অভ্যন্তরীণ বাজার:
- i) ভারতের বিশাল জনসংখ্যার কারণে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে রেডিমেড পোশাকের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এই শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়েছে।
- ii) এছাড়াও, শহুরে জনসংখ্যার ফ্যাশনের প্রতি ঝোঁক এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনধারা পোশাকের চাহিদা বাড়িয়েছে।
৩. কাঁচামাল প্রাপ্যতা:
- i) ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধান তুলা উৎপাদনকারী দেশ, এবং তুলা হলো রেডিমেড পোশাকের প্রধান কাঁচামাল। এছাড়া পলিয়েস্টার, সিল্ক এবং উলের মতো অন্যান্য কাঁচামালও সহজলভ্য।
- ii) দেশীয় কাঁচামালের সহজলভ্যতা রেডিমেড পোশাক শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হয়েছে।
৪. তৈরি পোশাক শিল্পের দীর্ঘ ঐতিহ্য:
- i) ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই ভারত সুতি কাপড়, সিল্ক, এবং অন্যান্য বস্ত্র তৈরিতে বিখ্যাত। এই ঐতিহ্যের কারণে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উৎপাদন কৌশল বিকশিত হয়েছে, যা রেডিমেড পোশাক শিল্পের বিকাশে সহায়ক হয়েছে।
৫. রপ্তানি বাজার:
- i) ভারত রেডিমেড পোশাকের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় রেডিমেড পোশাকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
- ii) রপ্তানি খাতের জন্য সুবিধাজনক সরকারি নীতি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে রপ্তানির পরিমাণ ক্রমবর্ধমান।
৬. প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন:
- i) পোশাক শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি এবং মেশিন ব্যবহারের ফলে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেলাই মেশিন, কাটিং মেশিন এবং কম্পিউটারাইজড ডিজাইনিং টুলের ব্যবহার রেডিমেড পোশাক উৎপাদনকে দ্রুত ও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
- ii) এছাড়া পোশাক শিল্পের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) এবং শিল্প ক্লাস্টার তৈরির মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে।
৭. ফ্যাশন ও লাইফস্টাইলের পরিবর্তন:
- i) ভারতের শহুরে ও আধুনিক সমাজে দ্রুত পরিবর্তনশীল ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইলের জন্য রেডিমেড পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ এখন ট্রেন্ডি এবং সুবিধাজনক পোশাক পরিধান করতে পছন্দ করে, যা রেডিমেড পোশাক শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৮. সরকারি সমর্থন:
- i) ভারত সরকার বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের বিকাশে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। টেক্সটাইল পার্ক স্থাপন, উৎপাদন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রণোদনা এবং সহজ বাণিজ্যিক নীতির মাধ্যমে সরকার এই শিল্পকে সমর্থন করছে।
- ii) রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কর ছাড় এবং প্রণোদনা দিয়েছে, যা রেডিমেড পোশাক শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে।
৯. বিশ্বায়ন ও আউটসোর্সিং:
- i) বিশ্বায়নের কারণে অনেক আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ড ভারতে তাদের উৎপাদন আউটসোর্স করছে, কারণ এখানকার উৎপাদন খরচ কম। এর ফলে ভারতীয় রেডিমেড পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে।
১০. ফাস্ট ফ্যাশন ধারণা:
- i) "ফাস্ট ফ্যাশন" ধারণা ভারতে বড় শহরগুলিতে জনপ্রিয় হয়েছে, যেখানে ফ্যাশন দ্রুত পরিবর্তিত হয় এবং কম দামে পোশাক কেনার সুযোগ বাড়ছে। এই প্রবণতাও রেডিমেড পোশাকের চাহিদা বাড়িয়েছে।
ভারতে রেডিমেড পোশাক শিল্পের বিকাশের পিছনে শ্রমশক্তির প্রাচুর্য, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা, এবং সরকারি সমর্থন মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে। ভারত বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান রেডিমেড পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
7) দুর্গাপুরকে ভারতের রুঢ় বলা হয় কেন ? অথবা , পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে লৌহ – ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ ?
দুর্গাপুরকে "ভারতের রুঢ়" (Rurh of India) বলা হয়- কারণ এটি ভারতের অন্যতম প্রধান শিল্পাঞ্চল এবং ভারী শিল্পের কেন্দ্র। রুঢ় হলো জার্মানির একটি বিখ্যাত শিল্প অঞ্চল, যেখানে প্রচুর পরিমাণে কয়লা ও ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে। দুর্গাপুরকে ভারতের রুঢ় বলা হয় কিছু বিশেষ কারণের জন্য, যেমন:
- ১. ভারী শিল্পের ঘনত্ব: দুর্গাপুর ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভারী শিল্প অঞ্চল। এখানে লৌহ-ইস্পাত কারখানা, প্রকৌশল শিল্প, এবং রাসায়নিক শিল্পের প্রচুর কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা(Durgapur Steel Plant) এবং অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ২. কয়লা এবং লৌহ আকরিকের প্রাচুর্য: দুর্গাপুরের কাছাকাছি দামোদর উপত্যকা অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কয়লার মজুত রয়েছে, যা লৌহ-ইস্পাত এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার লৌহ আকরিকের খনিগুলি দুর্গাপুরের শিল্প কারখানাগুলিতে কাঁচামাল সরবরাহ করে।
- ৩. উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা: দুর্গাপুরের রেল এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। এটি কলকাতা থেকে রেলপথে এবং সড়কপথে সহজেই সংযুক্ত, যা শিল্পজাত পণ্য এবং কাঁচামালের পরিবহনকে সহজতর করে তোলে। কলকাতা বন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা রয়েছে।
- ৪. বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ সুবিধা: দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) দুর্গাপুর এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এর ফলে ভারী শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সহজলভ্য হয়।
- ৫. কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক বিকাশ: দুর্গাপুরের শিল্প অঞ্চল বহু মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করে, যা স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে সহায়ক। এখানকার শিল্পাঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক মানুষ কাজ করে, যা দুর্গাপুরকে একটি শিল্প-নগরী হিসেবে গড়ে তুলেছে।
- ৬. প্রকৌশল এবং অন্যান্য ভারী শিল্প: দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ছাড়াও, এখানে প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক, সিমেন্ট এবং অন্যান্য ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ধরনের ভারী শিল্প এলাকাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
এইসব কারণের জন্য দুর্গাপুরকে ভারতে
ভারী শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু বা
রুঢ় অফ ইন্ডিয়া বলা হয়, যেমন রুঢ় অঞ্চলে জার্মানির ভারী শিল্প ঘনীভূত হয়েছে।
Read more / আরও পড়ুন
☛
কৃষিকাজ - উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল MCQ|WB HS Class 12 Geography Farming MCQ
☛
HS Geography Atmosphere Climate And Natural Vegetation Suggestion Question Answer - উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক গাছপালা প্রশ্ন উত্তর
☛
HS 2025 Geography Soil Suggestion Question Answer - উচ্চমাধ্যমিক 2025 ভূগোল মৃত্তিকা সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর
☛
HS 2025 Geography Landform Process Suggestion Question Answer - উচ্চমাধ্যমিক 2025 ভূগোল ভূমিরূপ প্রক্রিয়া সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর
সর্বশেষ কিছু কথা
এই আর্টিকেলটি তথ্য এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এতে দেওয়া তথ্যের সঠিকতা, পূর্ণতা, বা বর্তমানতার জন্য লেখক বা প্রকাশকের কোনও নিশ্চয়তা নেই। যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে, পাঠককে নিজস্ব গবেষণা ও বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই আর্টিকেলে ব্যবহৃত তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত এবং পাঠকদের সুবিধার জন্য প্রদত্ত। তবে, প্রতিটি ব্যক্তির বা পরিস্থিতির জন্য তথ্যের প্রাসঙ্গিকতা ভিন্ন হতে পারে। সুতরাং, লেখক বা প্রকাশক কোনওরূপ ক্ষতি বা ক্ষতির জন্য দায়ী হবে না যা এই আর্টিকেল পড়ার কারণে হতে পারে।
বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এর সময়মতো হালনাগাদ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য পাঠককে অতিরিক্ত উৎস বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই আর্টিকেলটি কোনো বিশেষজ্ঞ পরামর্শ বা পরামর্শের বিকল্প নয় এবং এটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।